According to Musa, there are 3 more people in the intelligence network

রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা মামলার তদন্ত কিছু দিন ধরেই থমকে ছিল। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে না পারা, অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার না হওয়ায় ধীরগতিতে চলছিল আলোচিত এই মামলার তদন্ত। তবে হঠাৎ করে নতুন মোড় নিল তদন্ত। শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে।

তাঁরা হলেন- টিটু, রবিন ও সোহেল। টিপু হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্র মিলেছে। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে এই তথ্য নিশ্চিত করে। তবে তাঁরা কেউ প্রকাশ্যে গ্রেপ্তার তিনজনের ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। কিন্তু এটা নিশ্চিত করেছেন, টিপুর হত্যার প্রধান সমন্বয়কারী সুমন শিকদার মুসার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের গোয়েন্দা জালে নেওয়া হয়েছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ইন্টারপোলের মাধ্যমে মুসাকে দেশে ফেরানোর পর একাধিক দফায় হেফাজতে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন মুসা। কিলিং মিশনে কার কী ভূমিকা ছিল সেটি তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছিল। মুসার তথ্য যাচাই করতে বিভিন্ন সময় আরও কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে ডিবি। মুসা ছাড়াও এই মামলায় গ্রেপ্তার আরও কয়েকজন বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদে জানান, টিপু হত্যা পরিকল্পনায় টিটু, রবীন ও সোহেল সম্পৃক্ত। এর মধ্যে টিটু সবচেয়ে দুর্ধর্ষ। তাঁর সঙ্গে অপরাধ জগতের যোগসূত্র দীর্ঘদিনের। যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্ক্কীর সঙ্গে এক সময় তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কীকে হত্যা করা হয়েছিল।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন টিপু হত্যার ঘটনায় শুটার ছিলেন মাসুম মোহাম্মদ আকাশ। পুরানা পল্টনের ‘আর্মস মিউজিয়াম’ নামের একটি অস্ত্রের দোকানের গুলি টিপু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়। ওই দোকানের মালিক কর্ণধার ইমরান হোসেন জিতুর কাছ থেকে ১৫ রাউন্ড গুলি নিয়ে মতিঝিলের ১০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুর রহমান রাকিব পৌঁছে দেন সুমন সিকদার মুসার হাতে। এ ছাড়া দুবাইয়ে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টির নির্দেশে ইশতিয়াক আহমেদ জিতু অস্ত্র দেন মোল্লা শামীমের কাছে। কিলিং মিশনের সময় মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন শামীম। বর্তমানে তিনি ভারতে পালিয়ে আছেন। মুসার মতো ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফেরাতে নানামুখী কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ সদরদপ্তর।

তদন্ত সূত্র বলছে, মতিঝিল ও শাহজাহানপুরকেন্দ্রিক টেন্ডার, চাঁদাবাজিসহ নানা বিরোধের জের ধরে বিদেশে পলাতক একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর টার্গেটে ছিলেন টিপু। এতে মূল ভূমিকা পালন করেন দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি ও জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক। টিপুর আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে মতিঝিল ও শাহজাহানপুরকে নিজেদের ‘দখলে’ রাখার নীলনকশা থেকেই এই খুনের পরিকল্পনা। এখন পর্যন্ত আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার এবং রিমান্ডে নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে এখনও হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল জব্দ করতে পারেনি পুলিশ।

গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে মতিঝিল এজিবি কলোনি থেকে বাসায় যাওয়ার পথে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে মাইক্রোবাসে গুলি করলে টিপু ও রিকশাযাত্রী কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি নিহত হন। এই ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ডলি পরদিন সকালে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।