বর্তমান চাপযুক্ত জীবনে মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অফিসের কাজের চাপ, অর্থনৈতিক চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, সন্তানের পড়ার চাপ ইত্যাদি কারণে সবাইকে কমবেশি চাপে থাকতে হয়। কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ অনেক সময় স্বল্প মেয়াদে মানুষকে কাজের প্রতি অনুরাগী হতে সহায়তা করে। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী অ্যাডাম বোরল্যান্ড বলেন, সীমিত মানসিক চাপ আমাদের প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সহায়তা করে। মানসিক চাপযুক্ত পরিস্থিতিতে আপনি যত বেশি পড়বেন, তা সামলানোর দক্ষতাও আপনার মধ্যে তত বাড়বে।
মানসিক চাপ বা উদ্বেগ মানুষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যারও জন্ম দেয়। যেমন– ঘুমের ব্যাঘাত, বিরক্তি বা খিটখিটে মেজাজ, কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া, খাদ্যের প্রতি অনীহা, অ্যালকোহল, তামাক বা মাদকাসক্তি ইত্যাদি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন মানসিক চাপ অনুভবের কারণে মানুষের অগোচরে জন্ম নিতে পারে ভয়ানক এক সমস্যা। উদ্বেগের মুহূর্তে দেহের সহানুভূতিশীল নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে মানুষের দেহ উদ্বেগ দমনে নিজের অজান্তেই শারীরিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এ রকম পরিস্থিতিতে দেহে যেসব পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় সেগুলো হলো হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশিতে টান অনুভব করা ইত্যাদি।
এ পরিবর্তনগুলোর মূল কারণ কর্টিসোল (Cortisol)। এই স্টেরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে বা অতিমাত্রায় কমে গেলে দেহে নানা সমস্যা তৈরি হয়। অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ঘন ঘন প্রস্রাব, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত পিপাসা লাগা, ত্বক ফেটে যাওয়া, পেশির দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপের ক্ষেত্রে দেহ কর্টিসোল উৎপাদন অব্যাহত রাখে এবং তা বিভিন্ন শারীরিক ব্যাধি যেমন– ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিপাক সংক্রান্ত রোগের জন্ম দেয়।
মানসিক চাপ এড়ানোর উপায়: মানসিক চাপবিষয়ক প্রবন্ধটি যদি ইতোমধ্যে আপনার মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়– তবে জেনে নিন কীভাবে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদিকে সহজেই জীবন থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন–নিয়মিত ব্যায়াম, মেডিটেশন বা ধ্যান, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কাজকর্ম করা, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলাফেরা করা ইত্যাদি। তারপরও সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।