প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে দুই সন্তানসহ স্ত্রীকে হত্যা করেন স্বামী: পিবিআই

নরসিংদীর বেলাবতে স্ত্রীর নামে করা ঋণের চাপ থেকে মুক্তি, জুয়ার টাকা না থাকা এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই দুই সস্তানসহ স্ত্রীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন গিয়াস উদ্দিন শেখ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যার প্রকৃত রহস্য।

মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান আসামির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন।


গত শনিবার (২১ মে) গভীর রাতে স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৬), ছেলে রাব্বি শেখ (১২) ও মেয়ে রাকিবা শেখকে (৭) ছুরিকাঘাত ও ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যার পর পালিয়ে যান পেশায় রঙ মিস্ত্রি গিয়াস শেখ। খবর পেয়ে রোববার (২২ মে) সকালে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে বাড়ি ফিরে প্রতিপক্ষের ওপর হত্যার দায় চাপানোর চেষ্টা করেন তিনি।

এ সময় সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চাচাতো ভাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমের কর্মীদের কাছে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

পেশাগত কাজে বাড়ির বাইরে অবস্থান করাসহ তার দেয়া অন্যান্য তথ্য সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন গিয়াস উদ্দিন শেখ।

পিবিআই জানায়, অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন শেখ জুয়া খেলায় আসক্ত। জুয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও তিনি একাধিক এনজিও থেকে স্ত্রীর নামে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন। প্রতি মাসে তাকে ২২-২৩ হাজার টাকা কিস্তি দেয়া লাগে। যার নামে ঋণ সে মারা গেলে ঋণের টাকা মাফ হয় এমন ধারণা ছিল গিয়াস উদ্দিনের। অপরদিকে, পাশের বাড়ির রেনু মিয়া নামে একজনের সঙ্গে সম্প্রতি জমি সংক্রান্ত বিরোধ হয় তার। স্ত্রীকে হত্যা করে ঋণের টাকা থেকে বাঁচবে এবং জমি নিয়ে বিরোধ থাকা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাবে- এমন ভাবনা থেকেই গিয়াস উদ্দিন প্রথমে তার স্ত্রী রহিমা বেগমকে ও পরে দুই সস্তানকে হত্যা করে।

সোমবার (২৩ মে) বিকেলে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুল হকের আদালতে মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন গিয়াস উদ্দিন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আটকের পর তার দেয়া তথ্যমতে ওই গ্রামের গঙ্গাজলি বিল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও জঙ্গল থেকে রক্তমাখা ক্রিকেট ব্যাট উদ্ধার করে পিবিআই।

পিবিআইয়ের এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, পেশাদার জুয়াড়ি গিয়াস উদ্দিন শেখের হাতে জুয়ার টাকা না থাকলে তার মাথা ঠিক থাকে না। এ ছাড়া এক নারীর সঙ্গে ফোনে তার নিয়মিত কথা বলার তথ্যও পাওয়া গেছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আরও কেউ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।