বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ। ধর্ষণের শিকার সেই নারীর মামলায় অভিযুক্ত জহিরুল ছিলেন কারাগারে। তবে ভিকটিমের আপত্তি না থাকায় বিয়ের শর্তে মেলে জামিন। ভিকটিম ও অভিযুক্তের পারস্পরিক সম্মতিতে কারাফটকে হয় বিয়ে। বিয়ের পরই জামিন পান অভিযুক্ত যুবক।
আট মাস পর সোমবার হাইকোর্টের জিজ্ঞাসার জবাবে মামলার আইনজীবী জানালেন, তারা (ভিকটিম ও অভিযুক্ত) দুজনেই এখন সুখে শান্তিতে সংসার করছেন।
এ পর্যায়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘বিয়ের শর্তে জামিন-এর আদেশ নিয়ে আমাদের নানা সমালোচনা করা হয়েছে। ঐ আদেশ দেওয়ার পর এদের দাম্পত্য জীবনটা কেমন হয়, সেটা পর্যবেক্ষণে রাখতে ঐ আইনজীবীকে বলা হয়েছিলো। কারণ যদি সংসার না টিকত তাহলে হয়ত আমাদেরকে বিষয়টি নিয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হত। এ কারণে মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে ভিকটিম ও অভিযুক্তের সংসারের বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলেছিলাম।’
চলতি বছরের ২৭ মে ফেনীর সোনাগাজী থানার জহিরুল ওরফে জিয়া উদ্দিন (২১) বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা এক মেয়েকে ধর্ষণ করে। পরদিনই ভিকটিম বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিবাদীর সঙ্গে আমার প্রায় দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১২ টার সময় আমাকে মোবাইল ফোন করে ঘর থেকে ডেকে নেয়। আমি ঘর থেকে বের হলে বিবাদী আমাকে টেনে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। রাত ৩টার দিকে প্রেমের কথা বলে আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সকালে বিবাদী তার বাড়ি থেকে আমাকে চলে যেতে বলে। পরে আমার পরিবারকে আমাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(১) ধারায় দায়েরকৃত মামলায় জিয়া উদ্দিনকে পাঠানো হয় কারাগারে। তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ মামলায় ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ গত ২৩ আগস্ট আসামির জামিন নামঞ্জুর করে। এরপর হাইকোর্টে জামিন চান তিনি।
তার আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘বাদী ও বিবাদীর বয়স কম। তাদের জীবন যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য বিয়ের বিষয়টি আদালতে বলেছি। যাতে ছেলেটি জামিন পেলে মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারে। এরপর হাইকোর্ট ভিকটিমের আপত্তি না থাকায় অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে দুজন সম্মত হলেই বিয়ের আয়োজন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ঐ নির্দেশের পরই গত ১৯ নভেম্বর ভিকটিম ও অভিযুক্তের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিলে জামিনে মুক্তি পায় অভিযুক্ত যুবক।’
ঐ আদেশের পর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে একটি মামলার শুনানি করছিলেন আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী।
এ সময় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ঐ আইনজীবীর কাছে ঐ দম্পতির খোঁজখবর জানতে চান। তখন আইনজীবী বলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যেই ফোন করে তাদের খোঁজখবর নিয়ে থাকি। তারা সুখেই আছেন।’