দুবাই-শারজাহ ফ্লাইটে ওঠার আগেই বিমানবন্দরে যাত্রীরা পজিটিভ হচ্ছে

লন্ডনসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে করোনার দুই ডোজ টিকা নেয়ার সার্টিফিকেট সাথে থাকলেই ওই যাত্রীর বিদেশ যেতে কোনো বাধা নেই। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, দুবাই ও শারজাহগামী ফ্লাইটে উঠতে গেলেই ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত র্যাপিড পিসিআর ল্যাবে ৬ ঘণ্টা আগে স্যাম্পল জমা দিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে তারপর ফ্লাইটে উঠতে হচ্ছে।

গতকাল রোববার পর্যন্ত ইউএই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক এই নিয়মেই যাত্রীরা ঢাকা ত্যাগ করছেন বলে জানিয়েছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবি, শারজাহ ও দুবাইগামী যাত্রীদের মধ্য থেকে মাঝে মধ্যেই ফ্লাইটে ওঠার আগেই কোনো কোনো যাত্রীর রিপোর্ট পজিটিভ। তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ গত শনিবার রাতে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের দুই যাত্রী পিসিআর ল্যাবে করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে তাদের যাত্রা স্থগিত করা হয়।

শুধু দুবাইগামী নয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আবুধাবি, শারজাহ এবং এই রুটে চলাচলকারী বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা, এমিরেটসসহ অন্যান্য এয়ারলাইন্সের যাত্রীদের মধ্যে থেকেও কোন কোন যাত্রী করোনা পজিটিভ হওয়ার সংবাদ বিমানবন্দরের বহুতল কারপার্কিং এলাকায় স্থাপিত র্যাপিড পিসিআর ল্যাবের কর্মরত ডাক্তাররা সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে সংখ্যা জানিয়ে দিচ্ছেন। সেই মোতাবেক এয়ারলাইন্সগুলো পরে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বিমানবন্দর টার্মিনালে দায়িত্বরত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, আগে বিমানবন্দরের র্যাপিড পিসিআর ল্যাবে হ-য-ব-র-ল অবস্থা থাকলেও সেটি সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। যাত্রীরা যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে শৃঙ্খলভাবে র্যাপিড পিসিআর টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিচ্ছে। এর পর থেকেই তারা কারপার্কিং এলাকায় অবস্থান করতে থাকে। যদি কারো পজিটিভ ধরা পড়ে তাহলে সাথে সাথে হেলথ বিভাগের ডাক্তাররা আমাদেরকে ওই যাত্রীর নাম জানিয়ে দিচ্ছেন। একই সাথে সংখ্যা বেশি হলে সেটিও বলে দিচ্ছেন।

এ ছাড়াও পিসিআর ল্যাবে প্রতিটি এয়ারলাইন্সের একজন করে প্রতিনিধি ডিউটি করছে। তারা যাত্রীদের করোনার স্যাম্পল দেয়ার ব্যবস্থা করা এবং কিভাবে নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরের কোন গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে সেটিও মাইকিং করে জানিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ফ্লাইটে কতজন করোনা পজিটিভ যাত্রী ধরা পড়ছেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, দুবাই, আবুধাবি ও শারজাহগামী ফ্লাইটে ওঠার আগেই যে ক’জন যাত্রী করোনা পজিটিভ হচ্ছে সেই তথ্য সাথে সাথে ডাক্তাররা আমাদের সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলোকে যাত্রীর সংখ্যা কত হচ্ছে সেটি বলে দিচ্ছেন। এরপর আমরা সেই অনুযায়ী পরে ওই যাত্রীর যাত্রা বাতিল করছি এবং তাকে অবহিত করছি। এর আগ পর্যন্ত কোন যাত্রীকে এয়ারপোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। শুধু যাদের নেগেটিভ রিপোর্ট আসছে তাদের যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বিমানের ওই কর্মকর্তা বলেন, মাঝে মধ্যে বিমানের ফ্লাইটের যাত্রীদের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছে। যেমন শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় দুবাইগামী ফ্লাইটের দুই যাত্রী পিসিআর টেস্টে করোনা পজিটিভ হয়েছে। আমরা হেলথ বিভাগ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরই ওই দুই যাত্রীর যাত্রা বাতিল করে তাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। যদিও ওই যাত্রীরা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পজিটিভ হওয়ার রিপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরে এসেছিল। কিন্তু ইউএই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক বিমানবন্দরে ৬ ঘণ্টা আগে র্যাপিড টেস্টে স্যাম্পল দেয়ার পর তারা আবার পজিটিভ হন।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুবাই, শারজাহ ও আবুধাবিগামী যাত্রীদের র্যাপিড পিসিআর পরীক্ষা করানো হচ্ছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুতল কারপার্কিং এলাকার দ্বিতীয়তলায়। বিমানবন্দরে এসেই যেন যাত্রীরা সহজে যাতে সেখানে চলে যেতে পারেন সে জন্য তাদের সুবিধার্থে ডিপারচার ও ড্রাইভওয়ে এলাকায় নির্দিষ্ট রেখা দেয়া হয়েছে।

এ দিকে বিমানবন্দরের যাওয়া দুবাইগামী যাত্রীদের মধ্যে যারা করোনা পজিটিভ হচ্ছেন তারা এ সংবাদ শোনার পর অনেকটা ভেঙে পড়ছেন। কারণ অনেক কষ্ট করে তারা দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিমানের টিকিট কিনে, করোনা পরীক্ষার টাকা খরচ করে ফ্লাইট ধরতে এসেছিলেন। নতুন করে আবার এসব অতিরিক্ত টাকার জোগাড় কিভাবে করবেন এই ভেবে তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন। আবার কারো কারো ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। তখন বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। তারপরও প্রকৃতির নিয়মই হচ্ছে সবচেয়ে বড় নিয়ম। এটা সবাইকে মানতেই হবে। যোগ করেন ওই কর্মকর্তা।