২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে সম্মানিত হয়েছে গ্রামীণফোন। টানা সাত অর্থবছর ডিজিটাল বাংলাদেশের কানেকটিভিটি পার্টনার এ প্রতিষ্ঠানটি টেলিযোগাযোগ খাতের সর্বোচ্চ করদাতার এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি অর্জন করেছে। পাশাপাশি, গ্রামীণফোন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি এর ওপর ছয় মাস ধরে বহাল থাকা সিম বিক্রির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) অফিসার্স ক্লাব, ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গ্রামীণফোনকে এ সম্মাননা প্রদান করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণ করেন; এরপর তিনি দেশে সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিতে উপস্থিত সম্মানিত অতিথিদের গ্রামীণফোনের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান, যেন গ্রামীণফোন গ্রাহকদের জন্য নিয়মিত সিম বিক্রি কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারে। অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মো. আরিফ উদ্দিন এবং প্রতিষ্ঠানটির হেড অব করপোরেট ট্যাক্স মো. মহসিনও উপস্থিত ছিলেন।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে টেক এনাবলার গ্রামীণফোন ২,৪৯০ কোটি টাকা প্রত্যক্ষ কর এবং ১,১৫৮ কোটি টাকা উইথ হোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে জাতীয় কোষাগারে অবদান রেখেছে। নিজেদের যাত্রার শুরু থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বশীল করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোন জাতীয় কোষাগারে মোট অবদান রেখেছে ১০৩,৪৯৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭২,০৮৬ কোটি টাকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর হিসেবে এনবিআরকে প্রদান করেছে; এর মধ্যে ১১,১০৭ কোটি টাকা উইথ হোল্ডিং ট্যাক্স এবং বিটিআরসিকে দিয়েছে ২০,৩০৫ কোটি টাকা।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “টানা সাত বারের মতো টেলিযোগাযোগ খাতে গ্রামীণফোনকে সেরা করদাতা পুরস্কারে সম্মানিত করার জন্য আমরা এনবিআরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশ আজ যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে তার জন্য বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সকল নাগরিককে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন; এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অনুকরণীয় একটি উদাহরণ, যা প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। দেশের ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।”
তিনি আরও বলেন, “তবে, দুর্ভাগ্যবশত, এই বিশেষ দিনে, আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত কোয়ালিটি অফ সার্ভিস মানদণ্ড পূরণ করা সত্ত্বেও নতুন গ্রাহকদের সেবা দিতে পারছি না। এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি; এতে এনবিআর শুধু কর রাজস্বই হারাবে না পাশাপাশি কানেকটিভিটি এবং ডিজিটাল সলিউশনের ওপর নির্ভরশীল অন্য সব খাতে এর প্রভাব পড়বে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে সিম বিক্রির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে; কেননা, এ নিষেধাজ্ঞা কর রাজস্ব এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ -এর লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধার সৃষ্টি করবে।”
গত জুনে গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞার পর থেকে, দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে গ্রাহকসংখ্যা সামগ্রিকভাবে হ্রাস পেয়েছে – জুন মাসে এ খাতে মোট ১৮.৪৫ কোটি গ্রাহকসংখ্যা রেকর্ড করা হয়, অক্টোবর মাসে তা কমে এসে দাঁড়ায় ১৮.৬৭ কোটিতে। টেলিযোগাযোগ খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি, এই নিষেধাজ্ঞা প্রতিষ্ঠানটির স্টক মার্কেট বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং সম্ভাব্য এফডিআই আকর্ষণ করার জন্য দেশের ভাবমূর্তিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। এ ছাড়া, এনবিআর করপোরেট ট্যাক্স এবং পরোক্ষ কর থেকেও রাজস্ব হারাচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে প্রতি নতুন গ্রাহকদের সিম ট্যাক্স বাবদ ২০০ টাকা। এ ছাড়া, বিটিআরসি নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে জিপি’র ৬.৫ শতাংশ রাজস্ব হারাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গ্রামীণফোনকে এনবিআর কর বছরের ২০১৫-২০১৬, ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮, ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ সালে টেলিযোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা দিয়ে সম্মানিত করে।