ফুটবলীয় রোমাঞ্চের পসরা বসেছিল যেন আজ ওয়েম্বলিতে। আর তাতে শেষ হাসি হেসেছে ইতালিই। টাইব্রেকারে স্পেনকে হারিয়ে ইউরোর ফাইনালে উঠে গিয়েছে রবার্তো মানচিনির দল।
নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। ৬০ মিনিটে ইতালির হয়ে গোল করেন ফেদেরিকো কিয়েসা, ওদিকে স্পেনের হয়ে ৮০ মিনিটে গোল শোধ করেন আলভারো মোরাতা। শেষমেশ টাইব্রেকারে কপাল পোড়ে আগের রাউন্ডেই টাইব্রেকার লটারিতে সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে আসা স্পেনের।
মূল একাদশে চমক দেখায় স্পেন। ইতালির দুই বয়সী সেন্টারব্যাক লিওনার্দো বোনুচ্চি ও জর্জো কিয়েলিনি গতিশীল ফরোয়ার্ডদের (অস্ট্রিয়ার মার্কো আরনাউতোভিচ, ওয়েলসের গ্যারেথ বেল) সামলাতে বেগ পান, কিন্তু বুরাক ইলমাজ (তুরস্ক), হারিস সেফেরোভিচ (সুইজারল্যান্ড), রোমেলু লুকাকু (বেলজিয়াম) দের মতো প্রথাগত ‘নাম্বার নাইন’দের আটকে রাখতে সমস্যার মুখোমুখি হন না দেখেই কি না, একাদশে আলভারো মোরাতার মতো স্ট্রাইকারকে রাখলেন না কোচ লুইস এনরিকে। তাঁর জায়গায় নামান হলো রিয়াল সোসিয়েদাদের উইঙ্গার মিকেল ওইয়ারসাবালকে, ফলস নাইন হিসেবে। সঙ্গে ছিলেন লাইপজিগের দানি অলমো ও ম্যানচেস্টার সিটির ফেরান তোরেস। এই ফাটকাটা বেশ ভালোই কাজে লাগে স্পেনের জন্য।
যদিও শুরুটা বেশ ভালোই ছিল ইতালির। স্পেনকে বেশ ভালোভাবেই প্রেস করছিল। কিন্তু সময় যতো এগোতে থাকে, স্পেন আস্তে আস্তে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে। প্রথমার্ধে স্পেনের এই আধিপত্যই ছিল ম্যাচের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ।
লেফটব্যাক স্পিনাৎসোলার না থাকাটা বেশ ভুগিয়েছে ইতালিকে। চেলসির এমারসন সেভাবে স্পিনাৎসোলার অভাব পূরণ করতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা স্রোতের বিপরীতেই এগিয়ে যায় ইতালি। দানি অলমো ও জর্দি আলবার একটা আক্রমণ কোনোভাবে আটকে প্রতি আক্রমণ শুরু করে ইতালি। সেই প্রতি আক্রমণ থেকেই দুর্দান্ত এক ডান পায়ের বাঁকানো শটে ৬০ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন জুভেন্টাসের উইঙ্গার ফেদেরিকো কিয়েসা। এর আগে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে এই ওয়েম্বলিতেই গোল করেছিলেন কিয়েসা। বলা যেতেই পারে, ওয়েম্বলিতে গোল করতে বেশ পছন্দ করেন তিনি!
ইউরোর ইতিহাসে স্পেনের হয়ে ছয়টি গোল নিয়ে এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা এই মোরাতা। পেছনে ফেললেন ফার্নান্দো তোরেসকে। এর আগে ইউরোর সেমিফাইনালে গোল করা একমাত্র জুভেন্টাস খেলোয়াড় ছিলেন জিনেদিন জিদান। মোরাতা ও কিয়েসার সৌজন্যে এই এক ম্যাচেই আরও দুজন পেয়ে গেল জুভেন্টাস।
গোল খেয়ে ইতালি আরেকটু খাপছাড়া হয়ে যায়। তবে স্পেন যত সুযোগ সৃষ্টি করছিল, সেই অনুযায়ী কাজে লাগাতে পারছিল না। অতিরিক্ত সময়েও এই ধারা বজায় থাকে। ইতালি এই সময়ে ধীরে ধীরে নিজেদের খোলসবন্দী করে ফেলে। কিয়েসার জায়গায় বের্নার্দেসকিকে মাঠে নামিয়ে বুঝিয়ে দেয়, ম্যাচটাকে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পণাই করছে তাঁরা। ওদিকে স্পেন চেয়েছিল ১২০ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচের ভাগ্য লিখে দিতে। যেটা তাঁরা পারেনি।
পরে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। প্রথম শট মিস করেন ইতালির লোকাতেল্লি ও স্পেনের অলমো দুজনেই। এর পরে ইতালির হয়ে একে একে গোল করেন আন্দ্রেয়া বেলোত্তি, লিওনার্দো বোনুচ্চি, ফেদেরিকো বের্নার্দেসকি ও জর্জিনিও। স্পেনের হয়ে থিয়াগো আলকানতারা ও জেরার্দ মোরেনো লক্ষ্যভেদ করলেও সেই আলভারো মোরাতার কপালই পোড়ে আবার। তাঁর দুর্বল পেনাল্টি রুখে দেন ইতালির গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা। শেষে জর্জিনিও গোল করে নিশ্চিত করেন, ফাইনালে ইতালিই যাচ্ছে।
দুর্দান্ত এক গোল করে দলকে সমতায় ফেরালেও শেষমেশ তাই মোরাতাই হলেন ‘ভিলেন’। এর আগে গোল মিস করার কারণে সমর্থকদের রোষের শিকার হয়েছিলেন মোরাতা ও তাঁর পরিবার। এবার কী হয়, কে জানে!