Speaking of fever

জ্বর নিজে কোন রোগ নয়, এটা আসলে কোন একটা রোগের উপসর্গ মাত্র। এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণে জ্বর আসে যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, নাক-কান গলার সংক্রমণ, হাম, জলবসন্তু, ফুসফুসের সংক্রমণ, টাইফয়েড, কালাজ্বর, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি। মোট কথা আমাদের দেহে কোন সংক্রামিত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ঢুকে পড়লে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চায় তাকে বের করে দিতে যার প্রতিক্রিয়া বা প্রকাশ ঘটে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে। দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪ ফারেন হাইট। এর চেয়ে ১ ডিগ্রি ফারেন হাইট বাড়লে ভাবনার কিছু নেই অন্তত ১০০।ফারেন হাইট হলে জ্বর হিসাবে গণ্য করতে হবে। বেশীরভাগ মানুষের ধারণা শীতকালে জ্বর বেশী হয় আসলে গরমকালে জ্বরের প্রকোপ বেশী দেখা যায় কারণ এ সময় ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ বেড়ে যায়। আবার বর্ষায় পানিবাহিত জীবাণুর সংক্রমণে বিভিন্ন রকমের জ্বর হয় যেমন টাইফয়েড, ভাইরাল হেপাটাইটিস .

সব রকমের জ্বরের সাধারণ উপসর্গ দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। এছাড়া জ্বরের প্রকার ভেদে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। ভাইরাল ফিভারে সাধারণত সর্দি-কাশি, হাঁচি, গা ব্যথা, মাথা ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ, খাওয়ায় অনীহা, বমিভাব ইত্যাদি থাকে। কিছু ভাইরাল ফিভারে র‌্যাশ দেখা যায় যেমন জলবসন্তু, হাম, ডেংগু ইত্যাদি। অনেক সময় ছোট বাচ্চাদের জ্বরের তাপমাত্রা বেশী হলে খিচুনী শুরু হয় একে বলে ফেব্রাইল কনভালসন। দেহের ভারসাম্য হারিয়ে অতিরিক্ত বমি হতে পারে। জ্বরের সাথে খাদ্যনালীতে প্রদাহের জন্য পেটের উপরিভাগে ব্যথা, পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। বর্ষার শুরুতে ডেংগু জ্বরের প্রকোপ বেশী হয। এতে দেহের তাপমাত্রা অত্যধিক মাত্রায় ১০৩-১০৫ ডিগ্রি ফারেন হাইট পৌঁছে। তার সাথে মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, হাড়ে ও মাংসপেশিতে প্রচ- ব্যথা, খাবারে অনীহা, বমি বমি ভাব। সাধারণ ডেংগু জ্বর এক সপ্তাহের মধ্যে এমনি সুস্থ হয়ে উঠে কিন্তু হেমোরেজিক ডেংগু জরে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

জ্বরের লক্ষণ এবং শরারীরিক অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। প্রথমত রক্ত ও প্রশ্রাবের রুটিন পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয় তার সাথে জ্বরের চার্ট রাখলে সুবিধা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে রুটিন পরীক্ষা ছাড়াও স্পেশাল পরীক্ষার আবশ্যক হয়। অল্পমাত্রার জ্বরে ভাবনার কিছু নেই। কিন্তু যদি ১০২ -এফ এর উপরে ৩-৪ দিনের মত স্থায়ী থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ দিতে হবে। এক্ষেত্রে পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে সমস্তু শরীর মুছে এবং কপালে ঠা-া পানির পট্টি দিতে হবে। এতে রোগী আরাম বোধ করবে। জ্বরের রোগীকে কখনই পুরু লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা উচিত হবে না। এতে ঘাম বাষ্পীভূক্ত হতে পারে না ফলে তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায়। ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখা দরকার তাতে আলো বাতাস চলাচলের সুবিধা হয়।

জ্বর কমানোর জন্য প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেয়া উচিত। তার সাথে উপরোক্ত পরিচর্যা, তবে খেয়াল রাখতে হবে জ্বর যতদ্রুত কমানো যায় ততই ভাল। তা না হইলে অতিরিক্ত তাপে মস্তিষ্কে এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। জ্বরের কারণ না জেনে নিজে থেকে এন্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়। সাধারণত ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিকের তেমন কোন ভূমিকা নেই। কথায় বলে এই জ্বরে ওষুধ খেলে ৭ দিন না খেলে এক সপ্তাহে সারে। এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হলে সেটা চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন কি ধরনের এন্টিবায়োটিক দরকার। উল্টো-পাল্টা এন্টিবায়োটিক খেলে রোগ চাপা পড়ে যায় এবং ওষুধের রেজিসটেন্স বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কা অবলম্বন করতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পর্যন্ত বিশ্রাম নিতে হবে। খেতে হবে প্রচুর তরল এবং পুষ্টিকর খাবার। তবে ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় যেমন চা, কফি পান করা উচিত নয় এগুলো শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। জ্বরের কারণে কিছুটা অরুচিভাব আসে বলে অনেকেই খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেন। ফলে শারীরিক দুর্বলতা বেড়ে যায়। দ্রুত সুস্থ স্বাভাবিক হতে গেলে তাকে সহজপাচ্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেমন স্যুপ, সরবত, পানি, ফলের রস, নরম ভাত, ডাল, মাছ, দুধ ইত্যাদি। জ্বর কমানোর ওষুধ খেলে ঘামের ফলে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। সেজন্য লবণ-চিনির শরবত, ফলের জুস, গ্লুকোজ পানি খেলে দুর্বলতা কমে স্বস্তি বোধ হয়। তবে ফ্রিজের ঠা-া খাবার, ভাজা-ভুজি, ফার্স্টফুড, বেশী মসলাদার খাবার খাওয়া একদম উচিত না। ঠা-া পানিতে মাথা ধুয়ে গা ভাল করে মুছে দিলেই যথেষ্ট।

জ্বর মানুষের সাধারণ সমস্যা। জ্বর হয় নাই বা জ্বরের যন্ত্রণা জানে না এমন কেউ নেই। সুতরাং জ্বর হলে পর্যাপ্ত পরিচর্যা এবং পথ্য খেলে অনেক সাধারণ জ্বর এমনি সেরে যায়।

ডা. জ্যোৎ¯œা মাহবুব খান
মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ।