গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে অপসারণের উপায় নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং সরকারে আলোচনা চলছে। জাতির পিতাকে নিয়ে কটূক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে স্থানীয় সরকার আইনও। এ জন্য দলের কেন্দ্রীয় নীতনির্ধারণী নেতারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দলের অন্তত ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতা কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এই নেতারা কালের কণ্ঠকে বলেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে রাখার আর সুযোগ নেই। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তাঁকে অপসারণ করা হবে, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বরখাস্ত করা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। সে কারণে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। গাজীপুর বা ঢাকায় মামলা হতে পারে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন সংক্ষুব্ধ নেতাকর্মী মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে দলীয় নেতাদের জানিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সবুজ সংকেত পেলেই মামলা করবেন তাঁরা।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এক সভায় দলের গাজীপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁর দলীয় সদস্য পদও বাতিল করা হয়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল এক অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আইন দেখে জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে মন্তব্য করা হবে। এখন মেয়র আছেন। কত দিন থাকবেন, সেটা আইনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাহাঙ্গীর যেসব কথা বলেছেন, তাতে সংবিধান অবমাননা হয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে বক্তব্য দিয়েছেন। এগুলো দেশের প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আইনি বিষয়গুলোর আইনি পথেই ফায়সালা হবে।
ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সরাসরি বলেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। আর এসব মামলা হলে তাঁর মেয়র পদ থাকবে না।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের সব জনপ্রতিনিধির জন্য একটি শিক্ষণীয় বার্তা হলো—মেয়র জাহাঙ্গীরের বহিষ্কার। যত ক্ষমতাবান জনপ্রতিনিধিই হন না কেন, সবাইকে দলের নীতি-আদর্শ মেনে চলতে হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলা শুধু গাজীপুরবাসী নয়, দেশের যেকোনো প্রান্তে যে কেউ করতে পারে।
গাজীপুরে দলের নেতাকর্মীদের কেউ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে আজমত উল্লাহ খান বলেন, ‘যখন বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির ভিডিও ভাইরাল হলো, তখন অনেকেই আমাকে মামলা করতে চান বলে জানিয়েছিলেন। তাঁরা কিভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেটা আমার জানা নেই।’
বহিষ্কারে দ্বিমত নেই কেন্দ্রের কারো
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কারের পক্ষে ছিলেন সব নেতা। সভায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ সদস্যের মধ্যে ৪৬ জন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজনও এই বহিষ্কারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি।