ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) বিশেষ শাখা কুদস বাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পরপর দুটি বিস্ফোরণে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৪০ জন। বুধবার বিকেলে হাজারো মানুষের অংশ নেওয়া স্মরণ অনুষ্ঠানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এই বিস্ফোরণকে সন্ত্রাসী হামলা বলছে ইরান। হতাহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে দেশটি। খবর এএফপির।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা এই হামলার পর এখন আরও বেড়েছে। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় হামাসের উপপ্রধান আল-আরুরি নিহত হওয়ার একদিন পরই এই হামলা হলো; যা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বেড়েছে উত্তেজনা।
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরমান প্রদেশের রাজধানী কেরমানে একসময়ের প্রভাবশালী ও চৌকস জেনারেল সোলাইমানির কবরস্থান রয়েছে। দেশটির বার্তা সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ শহরের ‘শহীদ গুলজার’ কবরস্থানের দিকে জিয়ারতের উদ্দেশে যাওয়ার পথে ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। প্রথম বিস্ফোরণটি হয় সোলাইমানির কবর থেকে ৭০০ মিটার দূরে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ১ কিলোমিটার দূরে ঘটে। কেরমানের জরুরি বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের কেরমান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে কেরমানের গভর্নরের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, এগুলো গ্যাস বিস্ফোরণ ছিল নাকি সন্ত্রাসী হামলা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আর কেরমানের ডেপুটি গভর্নর বলেছেন, শহরে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা সন্ত্রাসীরাই চালিয়েছে।
ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যাপক ধোঁয়া উড়ছে অনুষ্ঠানের এক প্রান্তে। বহু মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। শত শত মানুষ হুড়াহুড়ি করে জীবন বাঁচাতে পালানোর চেষ্টা করছেন। একাধিক অ্যাম্বুলেন্সে ঘটনাস্থল থেকে আহত ব্যক্তিদের স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কেরমান প্রদেশ রেড ক্রিসেন্টের প্রধান রেজা ফাল্লা রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেন, আমাদের উদ্ধার দলগুলো দ্রুত আহতদের সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সেখানে ভিড়ের কারণে চলাচল ব্যাহত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠানে আসা ব্যক্তিদের এলাকা থেকে সরে যেতে বলেছে।
তবে তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটি আত্মঘাতী হামলা হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ইরানের কর্তৃপক্ষ বলছে, রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থার মাধ্যমে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের কুদস ফোর্সের কমান্ডার এবং ইরানের আঞ্চলিক প্রভাবের প্রধান নায়ক সোলাইমানি ইরাকের বাগদাদে ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
লেবাননে হামাস নেতা আরৌরি হত্যায় ইসরায়েলকে দায়ী করেছে লেবানন। ইরানও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছে। অথচ একদিন পরই কেরমানে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটল।
এর আগে গত মাসে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাইরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আইআরজিসির সিনিয়র উপদেষ্টা সাইয়েদ রাজি মুসাভি নিহত হন।