অনুকূল পরিবেশে প্রাণবন্ত প্রাণীরা, বেড়েছে প্রজনন

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আয়েশি ঘুম দিচ্ছেন সুন্দরবনের রাজা। কেউ তাকে বিরক্ত করছে না। পাশের খাঁচায় সিংহ মামা তখনো খাওয়া শেষ করতে পারেননি। হাড় থেকে মাংস ছড়ানোর যুদ্ধে লিপ্ত তিনি। গত বুধবার দুপুর ১টার দিকে গিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় দেখা গেল এমন চিত্র। তবে মানুষের সঙ্গে খুনসুটি করে যাদের সময় পার হয়, সেই বানরগুলোকে দেখা গেল অনেকটাই মনমরা হয়ে বসে আছে। অনেকগুলো কলা ছড়ানো-ছিটানো রয়েছে মাটিতে। এগুলো খেতেও যেন তাদের আগ্রহ কম। বিরক্তিহীন সময় পার করা জিরাফগুলো মানুষ দেখলেই এখন এগিয়ে আসছে। অথচ মানুষ থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ তাদের। কেউ কলা হাতে নিয়ে এগিয়ে গেলে হাত থেকেই নিয়ে খাচ্ছে। প্রাণীগুলোর মধ্যে এখন যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

মানুষের কোলাহলহীন চিড়িয়াখানায় এখন গাছে গাছে ঝুঁলছে কাঁঠাল, আম। এবার এগুলো চড়া দামেই বিক্রি হয়েছে। চিড়িয়াখানার কর্মী রনজু আহমেদ জানালেন, এবার চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকার কারণে আম আর কাঁঠালের ফলনও ভালো হয়েছে। কেউ চুরি করে ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে না। প্রকৃতিও সতেজ।

দেখা গেল, রোদ পোহাতে ওপরে আসা জলহস্তীগুলোর বাচ্চারাও মায়ের সঙ্গে খুনসুটিতে ব্যস্ত। বিশাল এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছে হরিণের শাবকগুলো।

কর্তৃপক্ষ বলছে, কেউ বিরক্ত না করায় প্রাণীদের রোগব্যাধিও কমে গেছে। ফলে প্রজনন ক্ষমতা বেড়েছে। গত দেড় বছরে বেড়েছে প্রায় ২০০ প্রাণী। এটাকে করোনা মহামারির ‘সুফল’ হিসেবে দেখছেন জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। দর্শনার্থী না থাকায় এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে ঢেলে সাজানো হচ্ছে চিড়িয়াখানাকে। নেওয়া হয়েছে মাস্টারপ্ল্যান। সেখানে ১৬ কোটি টাকার উন্নয়মূলক কাজ চলছে। সিঙ্গাপুরের আদলে চিড়িয়াখানাকে এখন অনেকটা সাফারি পার্কের রূপ দেওয়া হচ্ছে। হাতিকে শেখানো হচ্ছে ফুটবল খেলা। শিশুদের জন্য তৈরি হচ্ছে পার্কের আদলে একটা প্লে জোন। লেক দুটিকে বানানো হচ্ছে নান্দনিক।১৯৭৪ সালে শুরু হওয়া এই চিড়িয়াখানায় আগে কখনো প্রাণীরা এত নিরিবিলি থাকার সুযোগ পায়নি। ফলে বহু প্রাণীর ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। এই অতিথিদের নিয়ে খানিকটা বিপাকেও আছে কর্তৃপক্ষ। বন্যপ্রাণী আইন মেনে হরিণ ও ময়ূর বিক্রির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০ জন আবেদনও করেছেন কেনার জন্য। শুধু কি বিরক্ত না করার কারণে প্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা বেড়েছে? কর্তৃপক্ষ বলছে, বিরক্ত না করার কারণে তাদের খুব একটা রোগব্যাধিও হচ্ছে না। ফলে প্রাণীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য এখন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। অনেক প্রাণী মানুষের উপস্থিতি বাচ্চা প্রসব করে না, এ সময় জিরাফও বাচ্চা দিয়েছে। দেখতে অনেকটা মুরগির বাচ্চার মতো ময়ূরের ৩৬টি বাচ্চা এখন শেডে যাওয়ার অপেক্ষায়।