সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পদত্যাগের ঘোষণা মাল্টার প্রধানমন্ত্রীর


অনলাইন ডেস্ক :


পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মাসকাট। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে আজ সোমবার তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। দুই বছর আগে এক নারী সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের জেরে বিক্ষোভকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বছরের জানুয়ারিতে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন মাসকাট। আগামী ১২ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির প্রধান হিসেবে পদত্যাগ করবেন তিনি। এরপরই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করতে লেবার পার্টিকে আহ্বান জানাবেন। মাসকাট বলেছেন, ‘মাল্টার একটি নতুন শুরু দরকার। আমি কেবল সেটার জন্য সবুজ সংকেতই দিতে পারি।’ লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মাসকাটের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তাঁর দল থেকে নির্বাচিত আইনপ্রণেতারা।

মাসকাটের পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে দুই বছর আগের একটি ঘটনা। ২০১৭ সালে গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান দেশটির অনুসন্ধানী নারী সাংবাদিক ডাফনে কারুয়ানা গালিয়াজা। মাল্টার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছিলেন ডাফনে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাফনের হত্যাকারীরা পুরস্কার হিসেবে দেড় লাখ ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমানে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকারও বেশি) পেয়েছিলেন। ডাফনের ছেলে দাবি করেন, তাঁর মায়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জড়িত।

অভিযোগ উঠেছে, দুর্নীতির ঘটনা যেন ফাঁস না হয়, সে কারণে সরকারের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী গাড়িতে বোমা লাগিয়ে ডাফনেকে হত্যা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফও এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, এমন অভিযোগও ওঠে। পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় মাসকাট বলেছেন, ‘ওই ঘটনার সমস্ত দায়ভার আমার। ওই ঘটনার তদন্তকাজের কিছু অংশ ভালোভাবেই এগিয়েছে, কিছু অংশ আরও ভালোভাবে সামাল দেওয়া যেত।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী মাসকাটের তাৎক্ষণিক পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী ভালেত্তাতে বিক্ষোভ করেন অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে গত শনিবার ব্যবসায়ী ইয়ুর্গেন ফেনেখের বিরুদ্ধে ডাফনে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পরপরই এই আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ব্যবসায়ী ফেনেখ দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ১৭-ব্ল্যাকের মালিক। ২০১৬ সালে সাড়া জাগানো পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম এসেছিল এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির।

নিহত সাংবাদিকের পরিবার জানিয়েছে, ডাফনের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী মাসকাট সমবেদনা জানালেও তা যথেষ্ট নয়। গত দুই বছর ধরে এই ঘটনার বিচার করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। তিনি ক্ষমতায় থাকলে তদন্তপ্রক্রিয়া সুষ্ঠু হবে না বলেও মনে করে ডাফনের পরিবার। ছয় বছর ধরে মাল্টার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মাসকাট। দুবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে দুবারই বিপুল ব্যবধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে ছোট দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি।