ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বাড়ছেই

তুলনামূলক কম দামের জন্য প্রোটিন ও প্রাণীজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস ফার্মের ডিম ও ব্রয়লার মুরগি ছিল স্বল্প আয়ের মানুষের পছন্দের শীর্ষে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে এ দুটি পণ্যের দাম বাড়ছেই। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আর ফার্মের লাল ডিমের হালিতে বেড়েছে দুই টাকা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, কাওরানবাজার ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা যায়। তবে শুধু এ দুটি পণ্যই নয়, গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের তালিকায় আরও রয়েছে, সয়াবিন তেল, পামঅয়েল ও দেশি পেঁয়াজ। আর দাম কমেছে চিনি ও সরু চালের।

কারসাজি চক্রের কারণে চালের দাম বাড়ছেগতকাল খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। আর প্রতি হালি ফার্মের লাল ডিম ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের হালিতে দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। কিন্তু কেন বাড়ছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম? এ প্রসঙ্গে তুরাগ এলাকার নতুন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী লোকমান হাকিম বলেন, বাজারে চাহিদামতো ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ নেই। একই অবস্থা ডিমেরও। তিনি বলেন, করোনার সময় ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে দামের ওপর।

এদিকে সরকার সম্প্রতি সয়াবিন তেল ও পামঅয়েলের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। গতকাল খুচরা বাজারে সয়াবিন তেল ও পামঅয়েলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। গতকাল বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৩০ থেকে ১৩৬ টাকা, খোলা পামঅয়েল ১২০ থেকে ১২৬ টাকা ও পামসুপার ১২৭ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২৯ টাকা, পামসুপারের দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার সয়াবিন ও পামঅয়েলে ৭ টাকা বেড়েছে।

দাম বেড়েছে দেশি পেঁয়াজেরও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে চিনি ও সরু চালের। প্রতি কেজিতে তিন টাকা কমে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আর সরু চালের দাম কেজিতে এক টাকা কমে মানভেদে নাজিরশাইল/মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। অন্যান্য চালের মধ্যে মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

এসব নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বাজারে এখন মাছের দামও বেশ চড়া। ইলিশের মৌসুম হলেও বাজারে এখনো আশানুরূপ সরবরাহ বাড়েনি মাছটির। ফলে একদিকে যেমন ইলিশের দাম বেশি, অন্যদিকে এর প্রভাবে অন্য মাছের দামও চড়া। কারণ, প্রতি বছর বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়লে অন্য মাছের দাম বেশ কমে যায়। গতকাল বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মানভেদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। অথচ গত বছর মৌসুমের এই সময়ে এক কেজির ইলিশ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে অন্যান্য মাছের মধ্যে চাষের রুই, কাতলা ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা, শিং ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কই ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, পাঙ্গাশ ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, চিংড়ি আকারভেদে ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রূপচাঁদা ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।