বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে ২য় বৃহত্তম উৎস হলো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। তৈরি পোশাক খাতের পরেই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য হতে রপ্তানি আয় এসে থাকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো)।
কিন্তু এই খাতের মূল কাঁচা মাল হলো কাঁচা চামড়া। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই কোটি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে ১ কোটি ২৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ হয় কোরবানির সময় গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য পশুর কোরবানি হতে। গত এক দশক হতে কাঁচা চামড়ার বাজার মূল্য প্রায় নাই বলেলই চলে। এক সময় চার-পাঁচ মণ গরুর চামড়া তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেটা বিক্রি হয় মাত্র ৪০০-৫০০ টাকায়। বাংলাদেশে কোনো পণ্যের দাম একবার বাড়লে সেটা আর কমে না।
একমাত্র ব্যতিক্রম চামড়ার ক্ষেত্রে। গত কয়েক বছর কাঁচা চামড়ার মূল্য কমতেই আছে। এক সময় একটি খাসির চামড়া যেখানে ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হতো এখন সেটা বিক্রি হয় ৩০-৫০ টাকায়। এই চামড়ার দর পতনের যথাযথ কারণ খুঁজে তার সমাধান করতে হবে।
অর্থনীতিতে সাধারণত কোনো পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগান দ্বারা কিন্তু এখানে বাজার অর্থনীতি পুরো ব্যর্থ। এটাকে অর্থনীতিতে বাজার ব্যর্থতা বলা হয়। এই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ দরকার হয়। চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার আরো কিছু কারণ আছে।
যেমন, ট্যানারি মালিক ও চামড়ার আড়তদারদের সিন্ডিকেট বা কারসাজি। তারা দামের ওপর প্রভাব বিস্তার করে ও কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বিক্রেতাকে বাধ্য করে। সাধারণত জেলা পর্যায় হতে চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির সময় চামড়া কিনে, লবণ দিয়ে ঢাকায় আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের সরবরাহ করে। অভিযোগ কোরবানির আগে চামড়াশিল্পের মালিকদের যে ঋণ দেওয়া হয় সেই টাকা তারা ব্যবসায়ীদের ঋণ শোধ না করে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ ও স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়ের কাজে ব্যবহার করে। ফলে চামড়া ক্রয়ে টাকার প্রবাহ কমে যায়।
জেলার ব্যবসায়ীরা টাকার অভাবে চামড়া কম কিনে চামড়ার চাহিদা কমে যায় ফলে চামড়ার দাম কমে। অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম অনুসারে কোনো পণ্যের চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হলে তার দাম কমে। বাংলাদেশে কাঁচা চামড়ার দাম ক্রমগত গত কয়েক বছর কমছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম যথেষ্ট বেশি। সরকারের পক্ষ থেকে চামড়া ক্রয়ের জন্য দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সরকারের দায়সারা এই নীতি আগেও বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ কাঁচা চামড়া ক্রয়ের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলে সেই দাম বাস্তবায়ন করার মতো মনিটরিং ও দক্ষতা সরকারের নেই, এটা আগের বছরগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে। তাই কোরবানির আগেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।