ব্যাংক সক্ষমতায় নির্ভর করবে বাজেট বাস্তবায়ন

আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন নির্ভর করবে ব্যাংক সক্ষমতার ওপর। কেননা প্রায় দুই লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার বিশাল ঘাটতি বাজেট অর্থায়নের একটি বড় অংশই অর্থাৎ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে। কিন্তু খেলাপি ঋণ ও অনাদায়ী ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রকৃত বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিশাল অঙ্কের ঋণ নেয়া হলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলোর জন্য কঠিন হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তারা বলছেন, সহজ শর্তে বিদেশী ঋণসহ বিকল্প অর্থায়নের ব্যবস্থা করলে সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ভালো হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, দেশের ব্যাংকিং খাত নানা কারণে দুঃসময়ের মধ্যে চলছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ব্যাংকের ঋণ আদায় হচ্ছে না। বেড়ে যাচ্ছে প্রকৃত খেলাপি ঋণ। কিন্তু এখন সরকার যদি ব্যাংক থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ নিতে চায় তাহলে মোটেও ঠিক হবে না। কারণ তাহলে ব্যাংক আট-নয় শতাংশে শুধু সরকারকেই ঋণ দিতে পারবে। বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার মতো সক্ষমতা থাকবে না। তিনি মনে করেন, ব্যাংক থেকে ঋণ কম নিয়ে সহজ শর্তে বিদেশী ঋণ নিলে এবং বিকল্প উপায়ে অর্থের সংস্থান করলে সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ভালো হতো।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ছয় লাখ তিন হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেটের তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ব্যবসাবাণিজ্য মন্দায় চলতি বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে বড় অঙ্কের অর্থাৎ এক লাখ কোটি টাকার উপরে ঘাটতি থাকবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এখনো চলছে। এমনি পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ের বড় অঙ্কের ঘাটতি থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় ঠিক রাখতে হলে বাজেট ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে। তখন ঘাটতি অর্থায়ন করতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা আরো বেড়ে যাবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দেড় বছর ধরে ব্যাংকগুলো নিয়মিত ঋণ আদায় করতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় এক বছর তিন মাস ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা ছিল। এ সময়ে ঋণ পরিশোধ না করেও ঋণগ্রহীতারা খেলাপি হননি, নিয়মিত থেকেছেন। উপরন্ত ব্যাংক থেকে বাড়তি ঋণ নিয়েছেন কেউ কেউ। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকের প্রকৃত ঋণ আদায় কমে গেছে। এখন সরকারের বাড়তি ঋণের জোগান দিতে হলে বেসরকারি খাতে কাক্সিক্ষত হারে ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হবে না।

প্রাথমিকভাবে প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকাই নেয়া হবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। অর্থাৎ ১০, ১৫, ও ২০ বছর মেয়াদি ঋণ নেয়া হবে বেশি। আবার এসব ঋণের সুদহার বেসরকারি ঋণের সুদহারের প্রায় সমান। ব্যাংকগুলো তাই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সরকারকেই বেশি হারে ঋণ দিতে চাইবে। তখন বেসেরকারি খাত আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।