বাবার প্রয়াণ দিবসে ছেলের মন ভারী

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ছিলেন নির্ভীক সাংবাদিক। একজন বলিষ্ঠ চিন্তানায়ক ও আপোষহীন সংগ্রামী। মানিক মিয়া একটি অবিস্মরণীয় নাম। বাংলার শ্যামল মাটির এই সন্তান ছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রাণশক্তি। নির্যাতিত গণমানুষের অধিকার আদায়ের আপোষহীন সংগ্রামী পুরুষ ভাবা হতো তাকে। নির্ভীক সাংবাদিকতার ইতিহাসের উজ্জ্বলতম জোতিষ্ক ছিলেন তিনি।

আজ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার প্রয়াণ দিবস। এ কারণে তার ছেলে রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মনটা ভারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের পেজে এই অনুভূতি ভাগাভাগি করেছেন তিনি। তার এই স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ঐতিহাসিক ঘটনা, মায়ের শোকগাথা।

মনটা ভারী। কেন জানি না। কাল ১ জুন। আমার বাবার মৃত্যু বার্ষিকী। মায়ের সেই রাতের লেখাটি পড়ছিলাম। কি এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা…

 

Posted by Anwar Hossain Manju on Tuesday, June 1, 2021

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘১ জুন আমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। মায়ের সেই রাতের লেখাটি পড়ছিলাম। কী এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমার মায়ের। ১৯৬৯ সালের আন্দোলন তখন তুঙ্গে। আইয়ুব (পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট) রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল সংলাপ করবেন। পূর্ব-পশ্চিমের সব নেতৃবৃন্দ উপস্থিত পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু তখনও বন্দি। কিন্তু তাকে ছাড়া বৈঠক হয় কীভাবে! শেষমেষ তাকে মুক্তি দিয়েই বৈঠকে যোগদানের ব্যবস্থা করতে হয়। আব্বা আমাকে তার সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। আমি দুই-একদিন পরে আসবো বলে সময় নিলাম। আব্বা বুঝলেন, আমাদের ছাত্রলীগের একটি সমাবেশ ছিল আইয়ুববিরোধী। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের সহ-সভাপতি

ফেসবুক স্ট্যাটাসটির শেষের দিকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘দুই দিন পর আব্বা আম্মাকে পিন্ডি ডেকে নিলেন। আব্বা আর ফিরে আসলেন না। ১ জুন তার মৃত্যুবার্ষিকী। মনটা আজ তাই ভারী।’

পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির একটি হোটেল কক্ষে ১৯৬৯ সালের ১ জুন মাত্র ৫৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন ইত্তেফাকের সম্পাদক, প্রতিষ্ঠাতা ও পূর্ব বাংলার সংগ্রামী বীর তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। পরদিন বিমানে করে তার মরদেহ পূর্ব পাকিস্তানে আনা হয়। ১৯৬৯ সালের ২ জুন লাখো প্রাণের অশ্রুধারার মধ্য দিয়ে আজিমপুর গোরস্থানে চিরবিশ্রামে যান কীর্তিমান এই পুরুষ।