গত বছরের মতো এবার বড় বন্যার আশঙ্কা নেই। প্রতিবছর যে স্বাভাবিক বন্যা হয়, এবারও তা হতে পারে। তবে এই বন্যায় মূলত উত্তরাঞ্চলের নয়টি জেলা সবচেয়ে বেশি কবলিত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকেরা অংশ নেন।
সভা সূত্র জানায়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা প্রশাসকেরা জানান, প্রতিটি জেলার উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বন্যার প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নের সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়গুলো বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করতে সেখানকার প্রধান ফটক ও কক্ষগুলোর চাবি নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য বরাদ্দ করতে বলা হয়েছে।
সভায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসীনসহ কর্মকর্তারা সরাসরি অংশ নেন। আর নয় জেলার প্রশাসকেরা ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন। মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বন্যার ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোতে করোনা যাতে না ছড়িয়ে পড়ে, সে ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বন্যাকবলিত কোনো পরিবার যাতে বাঁধে আশ্রয় না নেয়, তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের বন্যা গত বছরের মতো তীব্র হবে না বলে মনে হচ্ছে। তবে যে মাত্রায় বন্যা হোক না কেন, ওই নয়টি জেলায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করতে পারে। সে জন্য আমরা আগাম প্রস্তুতি নিতে সভায় সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি।’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সভায় যোগ দেওয়া বন্যার বেশি ঝুঁকিতে থাকা কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, জামালপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকেরা অংশ নেন। তাঁরা জানান, এসব জেলা প্রশাসনের আওতায় থাকা স্পিডবোট ও ট্রলার প্রস্তুত আছে।
সভা সূত্র জানায়, বন্যায় সবচেয়ে বেশি সম্ভাব্য ক্ষতির ঝুঁকির মুখে থাকা জেলা হিসেবে কুড়িগ্রাম নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সভায় জানান, তাঁদের নয়টি উপজেলা এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। গত বছরের বন্যায় সেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাদের বড় অংশ বাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়। গত বছর বন্যায় ওই জেলায় ১৩০টি প্রতিষ্ঠানের ভবন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়া হয়। সেখানে দুই লাখের মতো মানুষ আশ্রয় নেয়। বাকিরা বাঁধে আশ্রয় নেয়। এবার ওই জেলায় ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব, কেউ যাতে বাঁধে আশ্রয় না নেয়। তবে বন্যার সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা বাড়ির আশপাশের এলাকার সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিতে চায়। এবার যাতে তা না হয়, সে জন্য আমরা আগেরবারের চেয়ে বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি।’
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, গতকাল দেশের বেশির ভাগ এলাকা থেকে আকস্মিক বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলার পানি দ্রুত বাড়ছে। আগামী দু–তিন দিনের মধ্যে ওই তিন নদ–নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে যেতে পারে। উজানে ভারতীয় অংশে এবং দেশের ভেতরেও বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় দেশের ১০১টি নদ–নদীর মধ্যে ৬০টিতে পানি বাড়ছে, বাকিগুলোতে কমছে। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের ২৫টি জেলার নিম্নাঞ্চলে এবার বন্যা হতে পারে। উত্তরাঞ্চলের বন্যা ২০ থেকে ২৫ দিন স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা আছে।