দুনিয়া কাঁপানো ‘বন্ড’ সিরিজের প্রধান যোদ্ধা তিনি। টানা ১২ বছর বিশ্বখ্যাত এ সিরিজের নায়ক ছিলেন তিনি। সাতটি সিনেমায় জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয় করেছেন হলিউড অভিনেতা স্যার রজার মুর। প্রয়াত কিংবদন্তী এ অভিনেতার জন্মদিন আজ।
চরিত্রের মধ্যে কোনো অভিনেতা কতোটা ডুবে যেতে পারেন, তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্যার রজার জর্জ মুর। সাতটি বন্ড সিনেমায় অভিনয় করার পর ‘ডাবল ও সেভেন’-এর ব্যাটনটা টিমোথি ডালটনের হাতে দিয়ে যান। পরের পাঁচ বছর অন্য কোনো সিনেমা হাতে নেননি। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সারা জীবন আমাকে বন্ড বলে লোকে জানলেও তো কোনো ক্ষতি নেই।
তবে শুধু বন্ড হিসেবে মুরকে চিনলে তার প্রতি অবিচার হবে। ‘ম্যাভরিক’ কিংবা ক্রাইম শো ‘দ্য সেন্ট’ আর ‘দ্য পারসুয়েডার’-এ অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন তিনি। এমনকী ‘শার্লক হোমস ইন দ্য নিউ ইয়র্ক’ সিনেমায় শার্লকের ভূমিকাতেও অভিনয় করেন তিনি।
১৯২৭ সালে লন্ডনে জন্মেছিলেন স্যার রজার। পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে রজার ছোট থেকেই চেয়েছেন শিল্পী হতে। কার্টুন অ্যানিমেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানে ব্যর্থতাটা তার জীবনে যেনো শাপে বর হয়। এরপর পরিচালকের অনুরোধেই কাজ শুরু করেন সিনেমায়। প্রথমদিকে সফল না হলেও, জনপ্রিয়তার প্রথম স্বাদটা তিনি পান টেলিভিশনেই। বন্ডের চরিত্রে তাকে কাস্ট করার কথা আগেই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু টিভির কাজে ব্যস্ত মুর সময় দিতে পারেননি।
১৯৭৩ সালে প্রথম বন্ড ফিল্ম করেন ‘লিভ অ্যান্ড লেট ডাই’। বাকিটা তো ইতিহাস। পরের এক যুগ বন্ড সিনেমায় মার্টিনি হাতে দেখা যায় তাকে। ১৯৯১ সাল থেকে ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেন তিনি। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাকে নাইট উপাধি দেন। ২০০৮ সালে ফরাসী সরকার তাকে ‘অড্রে দ্যু আর্টস এতুদে লেটার’-এর কমান্ডার উপাধি দেন। এর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দেশের হয়ে যুদ্ধও করেছেন তিনি।
অনিচ্ছায় অনেক বিতর্কেও জড়িয়েছেন স্যার রজার। এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শন কনারি নন, তার প্রিয় বন্ড ড্যানিয়েল ক্রেগ। তা নিয়ে ঝড় ওঠে হলিউডে। কিন্তু বিতর্কে কোনোদিনই কান দেননি তিনি।
আদতে রজার মুর এক লড়াকু ব্যক্তির নাম। ২০১২ সালে তার স্কিন ক্যানসার ধরা পড়ে। ২০১৩ সালে ধরা পড়ে টাইপ টু ডায়াবেটিস। তারপর আবার আক্রান্ত হন নিউমোনিয়ায়। একবার স্টেজের মধ্যেও পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত পর্দার এ দুর্ধর্ষ নায়ককে পরাজিত হতে হয় ক্যানসার নামক ঘাতকের হাতে। ২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু জেমস বন্ডের মৃত্যু আসলেই আছে কি? শুভ জন্মদিন স্যার রজার মুর।