হিজাব বিতর্ক: যা বললেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

হিজাব মামলা জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি শীর্ষ আদালত বলেছেন, হিজাব বিতর্ক দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেবেন না। সময় এলে এর শুনানি হবে।

হিজাব বিতর্ক: যা বললেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারীর আইনজীবী ওই মামলার জরুরি ভিত্তিতে শুনানি দরকার বলে আবেদন করেন। প্রধান বিচারপতি এনভি রমানার বেঞ্চ তা খারিজ করে দিয়ে বলেন, আমরা জানি কী ঘটছে, কিন্তু এই ঘটনাকে দিল্লি টেনে আনার দরকার ছিল কি? চিন্তা করুন, যদি ভুল কিছু হয, আমরা রক্ষা করব।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ধর্মীয় পোশাক’ নয়, এমনই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়ে কলেজ খুলে দিতে বলেছিলেন কর্ণাটক হাইকোর্ট। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন এক পড়ুয়া। হলফনামায় ওই পড়ুয়ার দাবি ছিল, হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী রায় ব্যক্তি-পছন্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষত, মুসলিম নারী পড়ুয়াদের পছন্দের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আদালতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি।

আনন্দবাজারের এক খবরে বলা হয়, হিজাব নিয়ে সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা চলছে। হার্ইকোর্টে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলছে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করার আগে প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি বলেন, কর্নাটকের কলেজগুলো খোলা যেতে পারে, তবে যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন তাই পড়ুয়ারা কোনো রকম ধর্মীয় পোশাক পরে কলেজে প্রবেশ করতে পারবেন না।

শুধু মুখের কথা শুনে কোনো রকম প্রতিবেদন না করার জন্য সাংবাদমাধ্যমকে নির্দেশে দিয়েছেন আদালত। পডুয়াদের সঙ্গে আচারণে চরম সংযম বজায় রেখে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলেন, মাথায় স্কার্ফ পরা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কি না তা বিবেচনা করছি। সেই সঙ্গে এটি ধর্মীয় অনুশীলনের অংশ কি না তাও বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।

এদিকে হিজাব ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গে যাতে কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে সব থানার উদ্দেশে সতর্কতা জারি করেছেন রাজ্য গোয়েন্দারা। রাজ্যের সব জেলার পুলিশ সুপার, কমিশনারেটের মাধ্যমে সেই সতর্কবার্তা প্রতিটি থানাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই এরাজ্যে বেশ কিছু জায়গাতে হিজাবের স্বপক্ষে প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু  হয়েছে।

কর্ণাটকের একটি স্কুলে সম্প্রতি ছাত্রীদের হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এর পর আরও কয়েকটি স্কুল হিজাব পরে ছাত্রীদের ঢুকতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠে। এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন কর্নাটকের উদুপির পাঁচ পড়ুয়া। গত মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এক দফা শুনানি হয়।

কর্ণাটকের মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের হিজাব-বিতর্কে তোলপাড় গোটা ভারতবর্ষ। কর্ণাটক থেকে বিক্ষোভের পারদ এখন গোটা ভারতবর্ষে। এ নিয়ে চলছে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ। কলকাতায়ও এ নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে। এ নিয়ে সতর্ক দেশটির বিভিন্ন রাজ্য।

কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু শহরের স্কুল-কলেজের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে কর্ণাটক সরকার। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলে সরকারি এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। খবর আনন্দবাজারের।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পান্ত বলেন, ‘শহরে উত্তেজনা রয়েছে। নতুন করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। এ পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে স্কুল-কলেজের আশপাশে ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’

তিনি জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ২০০ মিটারের মধ্যে কোনো রকম জমায়েত বা বিক্ষোভ প্রদর্শন চলবে না।