সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার এক দশকেও শুরু হয়নি বিচার। যদিও র্যাব জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামত পরীক্ষায় দুজনের ডিএনএ প্রফাইল মিলেছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পরীক্ষায় দুজনকে শনাক্ত করা, এমনকি স্কেচ আঁকার কথাও জানানো হয়।
মামলার অগ্রগতি সেই দুজনের ডিএনএ নিয়ে সন্দেহ পর্যন্তই। এর মধ্যেই কেটে গেছে আরও অনেক বছর।
এর মধ্যে মামলার বিচার, চার্জশিট তো দূরের কথা ১০ বছরে তদন্তই শেষ হয়নি। ৮৫ বার সময় নিয়েও তদন্তকারীরা আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারেননি। এ পর্যন্ত ৮৬ বারের জন্য সময় চেয়েছেন। তবে সময় নেওয়ায় সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, তদন্ত এখন আর দেশে নেই। ঝুলে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে কবে ফরেনসিক ও ডিএনএ প্রতিবেদন আসবে, তা কেউ বলতে পারছেন না।
এদিকে দিন গড়িয়েছে মাসে, মাস বছরে। এক দশক আগে শৈশবে বাবা-মায়ের রক্তাক্ত লাশ দেখা মেঘ পা রেখেছে কৈশোরে। সে আজও জানে না তার স্মৃতিতে ভেসে বেড়ানো দুঃস্বপ্নগুলোর ন্যায় বিচার মিলবে কোথায়, কবে?
সময়টা ২০১২ এর ১১ ফেব্রুয়ারি। পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন এই সাংবাদিক দম্পতি। এরপর জল ঘোলা হয়েছে অনেক। পুলিশ ও ডিবির হাত ঘুরে তদন্ত ভার র্যাবের ঘরে। ৮৫ বার চেষ্টা করেও প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাইতো এখনো শুকায়নি মায়ের চোখের জল। শেষ নিঃশ্বাস অবধি বিচার চান তিনি। বললেন, কোনো এক সিন্দুকে আটকে আছে তদন্ত প্রতিবেদন।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আজিমপুরে মামার সঙ্গে কবর জিয়ারতে আসে মেঘ। পরে রুনির ভাই ১০ বছরেও বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন। তার মতে, হন্তারকের ছুরির আঘাতে এক ঝাপটাতেই তছনছ হয়ে যাওয়া সুখের সংসার কখনোই ফিরবে না। অন্তত বিচার পেলে কিছুটা তৃপ্ত হবে মন।
বাস্তবতা বোঝার আগেই নির্মমতার কালো মেঘে ঢেকে যাওয়া মেঘ কি পাবে তার পিতা-মাতা হত্যার বিচার। পূরণ হবে কি সন্তানহারা মায়ের শেষ আর্জি? জট খুলবে কি সব রহস্যের?
যদিও র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইউএসএ থেকে ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন তারা। শিগগিরই দেওয়া হবে তদন্ত প্রতিবেদন। তিনি আরও বলেন, ‘নিরপরাধ যাতে সাজা না পায় সে কারণে সব তদন্ত দ্রুত সময়ে শেষ করা যায় না।’
এদিকে, নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকরা। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে এ প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব প্রমুখ।
সমাবেশে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘সাংবাদিকতা পেশার দুজন মানুষকে এক দশক আগে হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যাকারীদের প্রশাসন এখনো গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ জানাচ্ছি। আদালত যদি এ বিচারের দিকে সুদৃষ্টি দেন, তবে সারা দেশের মানুষের প্রত্যাশার বিচার দ্রুত শেষ হবে।’
এদিন সকালে রাজধানীর আজিমপুরে সাগর-রুনির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্বজনরা। এ সময় শ্রদ্ধা জানান তাদের সহকর্মীরাও। অনেক ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সমাধান হলেও সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাগর-রুনির স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রভাবশালীদের হাত থাকায় বিচার হচ্ছে না।