তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট না খেলার কথা ছিল। পরে আইপিএলে দল না পাওয়ায় ফের সম্ভাবনা তৈরি হয়। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও জানিয়েছিলেন যে, সাকিব আফ্রিকায় খেলবেন। দুই ফরম্যাটের দলেই তার নাম আছে।
অথচ রবিবার বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের কাজে দুবাই যাওয়ার সময় সাকিব বলে গেলেন যে, তিনি আফ্রিকা সফরে যাবেন না!
সাকিব বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে বলতে হয়, আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে সে অবস্থায় আছি, আমার মনে হয় না আমার পক্ষে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব। এ কারণেই আমার মনে হয় আমি যদি একটা ব্রেক পাই, আমি যদি ওই আগ্রহটা ফিরে পাই, তাহলে আমার জন্য খেলাটা সহজ হবে। ‘
‘আফগানিস্তান সিরিজে আমার মনে হয়েছে আমি একজন প্যাসেঞ্জার। আমি যেটা হয়ে কখনই থাকতে চাই না। আমি খেলাটা একদমই উপভোগ করতে পারিনি, পুরো সিরিজটাই – টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে। আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু হয়নি। আমার মনে হয় এমন মানসিকতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলাটা ঠিক হবে। ‘
‘আমি এই কথা জালাল ভাইর সঙ্গেও আলাপ করেছি। জালাল ভাই বলেছেন দুই দিন উনিও চিন্তা করবেন। আমাকেও চিন্তা করার সময় দিয়েছেন। তারপর আসলে সিদ্ধান্ত একটা নেওয়া উচিত হবে বলে আমি মনে করি। এখন পর্যন্ত যদি আমার মন মানসিকতা থাকে, শারীরিক অবস্থা থাকে, তাহলে এটা দলের জন্যই ক্ষতি হবে। যেটা আগেও বললাম, আমার নিজের প্রতি নিজের যে প্রত্যাশা, মানুষের যে প্রত্যাশা, সেটা যদি আমি পূরণ করতে না পারি, তাহলে দলে থাকাটা খুবই দুঃখজনক হবে। এটা আমার টিম মেটদের সঙ্গে চিট করার মতো হবে। ‘
‘আমি পাপন ভাইর সঙ্গে কথা বলেছি। খেলব বলে এগ্রিও করেছি। কিন্তু এখন আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় আছি… সেটা এমন হতে পারে ওয়ানডেটা না খেলে টেস্ট সিরিজটা খেলতে পারি। তাহলে হয়তো ভালো মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় থাকতে পারব। সেটা হতে পারে। এগুলো আসলে আলোচনার ওপর নির্ভর করবে। তবে এই মুহূর্তে যদি আমি খেলি তাহলে আমার দেশের সঙ্গে, দলের সঙ্গে চিট করা হবে। এই জিনিসটা আমি অবশ্যই চাই না। আমি চাই নিজের প্রতি নিজের যে প্রত্যাশা, দল আমাকে যেভাবে চিন্তা করে, সেভাবে যেন পারফর্ম করতে পারি সেই অবস্থাতে থাকা। ‘
‘হ্যা, এটার কোনো গ্যারান্টি নেই যে আমি পারফর্ম করব। আমি অন্তত জানতে পারব যে আমি আমার সেরা অবস্থানে আছি টু পারফর্ম ফর দ্য কান্ট্রি। কিন্তু আমি যদি জানি যে আমি সেই অবস্থায় নেই তাহলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই। অন্য একটা জায়গা নষ্ট করা, দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে গাদ্দারি করা ঠিক বলে মনে করি না। আমার ক্যারিয়ারের যে অবস্থা, এখন আমার একটা লং টার্ম প্ল্যান দরকার। ‘
‘আমার ছুটিটা ছয় মাসের ছিল না। আমি এই বছরের নভেম্বর পর্যন্ত, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলব না। আমি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে মনোযোগ দিতে চেয়েছিলাম। যেহেতু পর পর দুই বছর দুটি বিশ্বকাপ আছে, আমি সাদা বলে মনোযোগ দিতে চাই। আমার মনে হচ্ছিল এই দুটি বিশ্বকাপে আমাদের বড় কিছু করা সম্ভব। তাই এই দুটি বিশ্বকাপেই মনোযোগ দিতে চাচ্ছিলাম। এর মানে এই না যে আমি টেস্ট ক্রিকেট একদমই ছেড়ে দিতে চেয়েছি। যেহেতু টেস্ট ক্রিকেটে দলের একটা ভারসাম্য তৈরি হয়ে যাচ্ছে, আমার কাছে মনে হয় যদি সাদা বলে মনোযোগ দেই, বয়স, ফিজিক্যাল ফিটনেস, সব কিছু মিলিয়ে আমি হয়তো আরো বেটার করতে পারতাম। ‘
‘একটা সমস্যা হলো, আমি জানি না আমার সামনে কি আছে। সিরিজ বাই সিরিজ পরিকল্পনা কঠিন। আমি যদি পুরো বছরের পরিকল্পনা জেনে যাই, আমার জন্য সেটা ভালো হবে। আমার পরিবারের প্ল্যান, ব্যক্তিগত প্ল্যান কিংবা যে কোনো কিছুর জন্যই ভালো হবে। এগুলো আসলে ক্লিয়ার থাকাটা অবশ্যই জরুরী। চিঠিটা অবশ্যই ছয় মাসের ছিল না। যদি আপনারা চিঠিটা দেখেন তাহলে দেখবেন যে ২২ নভেম্বর না এমন কিছু ছিল। বিশ্বকাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। ‘
‘পাপন ভাইর সঙ্গে কথা হয়েছে, কোনটা খেলব না খেলব। এই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজটা নিয়েই বেশি কথা হয়েছে। আমার জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জানা যে পরের ছয় মাস বা এক বছরে কি হবে। আমি পাপন ভাইর সঙ্গে কথা বলেছিলাম যে আমি পুরো সিরিজই খেলতে যাব। সে কারণেই দলে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু কালকে আফগানিস্তান সিরিজটা শেষ হওয়ার পর আমি অনেক চিন্তা করেছি। আমার পারফরম্যান্স খারাপ হয়েছে, ভালো হয়েছে, সেটা অন্য বিষয়। আমি যখন ক্রিকেটটা উপভোগ করতে না পারি সেটা দুঃখজনক। এটা দলের সদস্যদের ডিপ্রাইভ করা। এই জিনিসটা আমি কখনই চাই না। ‘
‘আমি এখন সিচুয়েশনেই নাই ক্রিকেট খেলার। এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি সিচুয়েশনে যখন আসব তখন অবশ্যই চাইব ক্রিকেট খেলতে। এটা ডিপেন্ড করছে বিসিবি ও আমার দুই জায়গায় আলোচনার ওপর। একটা সুন্দর অবস্থা তৈরি করা যেখানে গেলে আসলে দেশের ক্রিকেটের জন্যও ভালো হবে, আমার জন্যও ভালো হবে। ‘
‘শ্রীলঙ্কা সিরিজ নিয়ে এখনই বলা কঠিন। দুই মাস পর কি হবে সেটা বলা কঠিন। আমি যেটা বললাম, আমি ওয়ানডে সিরিজও খেলতে পারি। ১৫-২০ দিনের ব্রেকে হয়তো অনেক বড় পরিবর্তন আসতে পারে। দুই মাস পরেরটা আমার জন্য বলা কঠিন। এখন আমি কোন অবস্থায় আছি। আমি ক্লিয়ার থাকতে চাই। মানুষরা যেন বিভ্রান্ত না হয়। ‘