করছেন হেফাজতের সাথে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, একদিকে যেমন সরকারবিরোধী আন্দোলন করে সরকারকে কাপিয়ে দেওয়া তাদের গোপন মনোবাসনা পূর্ণ হলো না। তেমনি মাদ্রাসা শিক্ষা একটা সংকটের মধ্যে পড়লো। এতদিন ধরে হেফাজত যে সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা করে বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা আদায় করছিলো সেটিও যেমন এখন বন্ধ হয়ে গেল তেমনি সরকারকে চাপে ফেলে তথাকথিত ইসলামী বিপ্লব প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন, সে স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। ফলে এখন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম। গত কয়েকদিন ধরেই হেফাজতের নেতাদের যে বিভিন্ন রকম অপকর্মের ফিরিস্তি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তাতে এই সংগঠনের অনেক নেতা মান সম্মান নিয়ে বাঁচতে চান। তারা মনে করছেন যে, এই সংগঠনের সঙ্গে থাকলে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হেফাজতের একজন নেতা বলেছেন যে, আগে আমরা হেফাজত করতাম এটা গর্ব করে বলতাম। কিন্তু মামুনুল হকের ঘটনার পর এখন হেফাজতের পরিচয় দিতেই আমরা লজ্জা বোধ করছি। হেফাজতের যে কৌশল জুনায়েদ বাবুনগরী
নিয়েছিলো, সেই কৌশলের কারণে হেফাজতের দুই কূলই নষ্ট হয়ে গেছে বলে তারা মনে করছেন। ২০১০ সালে হেফাজত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো আল্লামা শফীর নেতৃত্বে। মূলত কওমি মাদ্রাসার অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে এই সংগঠনটি গঠিত হয়েছিলো। কিন্তু ২০১৩ তে গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করার নামে হেফাজত ঢাকা চলো কর্মসূচি দেয়। সেই কর্মসূচিতে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে কোমলমতি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মতিঝিল-পল্টন এবং বায়তুল মোকাররমে তাণ্ডব চালায়। সরকার সেসময় সফলভাবে হেফাজতকে দমন করতে করতে সক্ষম হয়েছিলো। এরপরই হেফাজত একটি সংগঠিত শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক মাঠে আবির্ভূত হয়। তখন সব রাজনৈতিক সংগঠনই হেফাজতকে কাছে পেতে নানা রকম চেষ্টা করে। তবে এই দৌঁড়ে সরকারই এগিয়ে যায়। সরকার হেফাজতের সঙ্গে একটি সমঝোতা করে এবং সেই সমঝোতায় হেফাজত বিভিন্ন ভাবে লাভবান হয়। হেফাজতের কথা সরকার যেমন পাঠ্য পুস্তক সংশোধন করে, তেমনি হেফাজতের নেতারা নানা ভাবে লাভবান হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতের নেতৃত্বে আসেন উগ্রবাদীরা। জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে বর্তমান হেফাজতের যারা নেতৃত্বে এসেছেন, তাদের সকলেরই একটি রাজনৈতিক পরিচয় আছে এবং এরা উগ্র মৌলবাদী ধারার প্রবক্তা বলেই হেফাজতের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। এরা এসে আল্লামা শফীর অনুসারীদেরকে হেফাজতের মূল কমিটি থেকে বিতাড়িত করেন এবং তারা হেফাজতকে ব্যবহার করে একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ করার চেষ্টা করেন। আর এই চেষ্টার অংশ হিসেবেই তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতা করে রাস্তায় নামে। এরপর নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর এর বিরোধিতা করে। এসব করতে গিয়ে তারা সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। হেফাজতে বাবুনগরীপন্থীরা
মনে করছিলো এই চ্যালেঞ্জ এর মধ্য দিয়ে সরকার মাথা নত করবে এবং তাদের আরো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। বিশেষ করে আর্থিক এবং অন্যান্য হবে লাভবান হওয়ার জন্যই মূলত তারা এ ধরনের শক্তি প্রদর্শনের কৌশল গ্রহণ করেছিলো বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু ২৬-২৭ মার্চের তাণ্ডব এর ফলে হেফাজতের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এই নেতিবাচক ধারণার রেশ কাটতে না কাটতেই মামুনুল হকের লাম্পট্য, ব্যভিচার এবং অবাধ যৌনাচার মানুষের মধ্যে এক ধরনের অরুচি তৈরি করেছে হেফাজত সম্পর্কে। মামুনুল হক যেনো হেফাজতের একটি প্রতীক হিসেবে এসেছে। এর ফলে হেফাজত সম্পর্কে সাধারণ মানুষ এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে শুরু করেছে। আর সরকার হেফাজতের ব্যাপারে একটি বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল গ্রহণ করে হেফাজতকেই একটা সংকটের মধ্যে ফেলেছে। এখন হেফাজত না পারছে সরকারের সাথে আপোষ সমঝোতায় যেয়ে ফায়দা লুটতে, না পারছে সরকার বিরোধিতার হুংকার ছাড়তে। ফলে হেফাজত এখন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। হেফাজতের নেতারাই এখন জুনায়েদ বাবুনগরীসহ উগ্রবাদী নেতাদেরকে গালমন্দ করছেন এবং তাদের জন্য হেফাজতের একুল-ওকুল দুকুলই গেলো বলে তারা অভিযোগ করছেন।