শোকের সঙ্গে মৃত্যুর কারণ নিয়ে কৌতূহল

শুধু ক্রিকেটবিশ্বে সীমাবদ্ধ নেই শেন ওয়ার্নের মৃত্যুশোক। এই শোক ছড়িয়ে পড়েছে খেলার মাঠ থেকে অভিনয়শিল্প ছুঁয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও। উৎকণ্ঠা—ওয়ার্নের অকালপ্রয়াণের সম্ভাব্য কারণ জানার কৌতূহলও প্রবল। উৎকণ্ঠার কারণও আছে।

তারিয়ে জীবন উপভোগ করার মন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। এই অনিয়ন্ত্রিত যাপিত জীবনই কি অকালে নীরবে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ওয়ার্নকে? নাকি দ্রুত ওজন কমানোর জন্য বিশেষ ডায়েটই মাত্র ৫২ বছর বয়সী কিংবদন্তির অকালমৃত্যুর কারণ? এর কোনো প্রশ্নেরই উত্তর এখনো মেলেনি। তবে গতকাল ওয়ার্নের ময়নাতদন্তও হয়েছে। সেটির ফল জানা যায়নি। থাইল্যান্ডের কোহ সামুই পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে রেখেছে, কোনো সন্দেহবাদ থেকে ময়নাতদন্ত নয়। এটা রুটিন ওয়ার্ক। একই কারণে শেন ওয়ার্ন যে হোটেলকক্ষে ছিলেন, সেটিও পর্যবেক্ষণ করেছেন স্থানীয় তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

ধারাভাষ্যকার হিসেবে আরেকটি অ্যাশেজ শেষ করার পর তিন মাসের ছুটি নিয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন। বিশ্রামের পাশাপাশি শরীরের ওজন কমানোরও সংকল্প ছিল তাঁর। তিন বন্ধুসহ উঠেছিলেন কোহ সামুইয়ের নামি রিসোর্ট সামুজানা ভিলাতে।

সফরসঙ্গীদের একজন ওয়ার্নের ওপর তৈরি তথ্যচিত্রের নির্বাহী প্রযোজক অ্যান্ড্রু নিওফাইটুই হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রথম সাক্ষী, ‘৫টায় (বিকেল) একসঙ্গে বাইরে যাওয়ার কথা। আমি দরজায় নক করে বলি, ওঠো, দেরি হয়ে যাচ্ছে। ’ কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অ্যান্ড্রু রুমে ঢুকে দেখেন বিছানায় অচেতন ওয়ার্ন। সঙ্গে সঙ্গে সিপিআর প্রয়োগ করেন। ততক্ষণে খবর পেয়ে বাকি দুই বন্ধুও আসেন। এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে জরুরি সাহায্য বলে জানিয়েছেন থাই ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালের পরিচালক দুলিয়াকিত ওয়াইত্তিয়াপং, ‘রোগীর জ্ঞান ছিল না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাঁর জ্ঞান ফেরানোর। প্রায় ৪৫ মিনিট সিপিআর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ’

কোহ সামুইয়ের হাসপাতালটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘ভিলাতে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় ওয়ার্নকে। এরপর তাঁকে আর ফেরানো যায়নি। হোটেল থেকে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে। সেখানে আমাদের একটি দল ৫টায় গিয়ে পৌঁছায়। তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন এবং উদ্ধারকর্মীরা মিলে সিপিআর দিয়েছে। আমাদের দলও সেখানে সিপিআর দিয়েছে। এভাবে ৪৫ মিনিট চেষ্টা করেছি। ’ কিন্তু সব চেষ্টাই বিফলে যায়।

সেই থেকে শোকস্তব্ধ ক্রিকেটাঙ্গন। বিভিন্ন মিডিয়া আউটলেটে শোকবার্তা জানিয়েছেন শেন ওয়ার্নের ঘনিষ্ঠজন এবং অনুসারীরা। সাবেক-বর্তমান, দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ক্রিকেটাঙ্গনের সবাই শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন ওয়ার্নকে। তাঁর রাজ্য ভিক্টোরিয়ার প্রধান রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের প্রস্তাব দিয়েছেন ওয়ার্নের পরিবারকে। অস্ট্রেলিয়ার সরকারের পক্ষ থেকেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও শোক জানিয়েছেন। সত্যি বলতে, ওয়ার্নের মৃত্যুতে শোকাহত মানুষের কোনো সংখ্যা নেই, পরিচয়েও ব্র্যাকেটবন্দি করার উপায় নেই।

তিনি এমন এক কীর্তিমান, যিনি একটি বৈশ্বিক সংস্কৃতিই পাল্টে দিয়েছিলেন। এই সংস্কৃতি ক্রিকেটের। যখন ফাস্ট বোলিংই সাফল্যের মূলমন্ত্র, তখন ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন অস্ত্র—লেগ স্পিনের বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন।

অবিশ্বাস্য সব নৈপুণ্যের সঙ্গে আকর্ষক ব্যক্তিত্ব মিলিয়ে শেন ওয়ার্ন এক অনন্য চরিত্র। কলকাতার একটি দৈনিকে যথার্থই লেখা হয়েছে, ‘ক্রিকেটের মারাদোনা ওয়ার্ন!’ মারাদোনা মানে ডিয়েগো ম্যারাডোনা। অবিশ্বাস্য সামর্থ্যের সঙ্গে অবাধ্য জীবনের উদ্ধত চরিত্র। বিনোদনের জগতে এমন চরিত্রই তো সবচেয়ে আকর্ষক। ম্যারাডোনা অন্য উচ্চতার। তবে শেন ওয়ার্নও খুব পিছিয়ে নেই!