শেষ বিকেলে আলোর ঝলকানিতে হাসি টাইগার শিবিরে

চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে শরিফুল ইসলাম হাতের আঙুলে চোট পাওয়ার পর ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ৬৮ রানের লিড নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল শেষ বিকেলে সফরকারীদের একটা বা দুইটা উইকেট তুলে নেওয়া। সেই লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার সুযোগ জাগিয়েছিল স্পিনাররা। তবে শেষমেশ সফলতা এল রানআউটের রূপে। দলীয় ৩৬ রানে প্রথম উইকেট হারাল শ্রীলঙ্কা। রান আউটের পর এমবুলদিনিয়াকে বোল্ড করে শেষ বিকেলের নায়ক তাইজুল।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কার লক্ষ্য ছিল উইকেট না হারিয়ে শেষ বিকেলটা কাটিয়ে দেওয়া। প্রায় সফলও হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বাঁধ সাধলেন তাইজুল। রানআউটে ওশাদা ফার্নান্ডোকে প্যাভিলিয়নের পথটা চিনিয়ে দিলেন তিনি। তাতে ৩৬ রানে প্রথম উইকেট হারাল শ্রীলঙ্কা।

ওশাদাকে ফিরিয়েই থামেননি তাইজুল। ‘নাইটওয়াচম্যান’ এমবুলদিনিয়াকে বোল্ড করে জোড়া ধাক্কা দিলেন তাইজুল। তাতে দিন শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ২ উইকেটে ৩৯ রান। সফরকারী দল এখনো পিছিয়ে ২৯ রানে। এর আগে চতুর্থ দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ৪৬৫ রান করে বাংলাদেশ। তামিমের পর সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম।

তবে চতুর্থ দিনেও উইকেট ব্যাটিং সহায়ক থাকায় আশা করা হচ্ছিল ব্যাট হাতে দ্রুত রান সংগ্রহের দিকে নজর দেবে বাংলাদেশ। কিন্তু ঢিমেতালের ব্যাটিংয়ে লিড নিতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৪০ ওভার পর্যন্ত। মাঠের অবস্থা বদল হয়নি তৃতীয় সেশনেও। কিন্তু ব্যাট হাতে চড়াও হতে পারেনি টাইগারদের কেউই। তাতে ইনিংস ঘোষণার আগে ৯ উইকেট হারিয়ে ৪৬৫ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

তৃতীয় দিনে ৩ উইকেটে ৩১৮ রান তুলে দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে বৃষ্টি বাগড়ায় দেরিতে শুরু হয় চতুর্থ দিনের খেলা। তবে খেলা শুরু হলে লিটন-মুশফিকের ব্যাটে স্বপ্ন দেখতে থাকে টাইগাররা। ১৬২ রানের উদ্বোধনী জুটির পর দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়লেও লিটন-মুশফিক বিপর্যয় সামাল দিয়ে আজ উপহার দিয়েছেন আরও একটি শতরানের জুটি। এই জুটিতে তারা যোগ করেন ২০১ রান।

দারুণ ব্যাটিং করা লিটন-মুশফিক দুজনই এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু বাঁধ সাধেন কনকাশন বদলি হিসেবে দলে আসা কাসুন রাজিথা। রাজিথার করা ১৩৫তম ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন দাস। উইকেটের অনেক বাহির দিয়ে যাওয়া বলটি খেলার কোন প্রয়োজনই ছিল না তার। আউট হওয়ায় আগে ১০ বাউন্ডারিতে ৮৮ রান করেন লিটন।

রাজিথার সেই ওভারে আরও একবার ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। লিটনকে ফেরানোর ঠিক পরের বলে তিনি ফিরিয়ে দেন আগের দিনে সেঞ্চুরি পাওয়া তামিমকেও। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে গতকাল মাঠছাড়া তামিম আজ যোগ করতে পারেননি কোন রান। মোকাবেলা করা প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান তামিম।

এ সময়ে যেন কিছুটা খাপছাড়া ব্যাটিং করছিল বাংলাদেশ। তামিমের পর প্যাভিলিয়নে ফেরার সম্ভাবনা জেগেছিল সাকিব আল হাসানেরও। রমেশ মেন্ডিসের স্পিন একটু বেশিই পায়ের দিকে এসে গিয়েছিল সাকিবের। তারপর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে গিয়েছিল শর্ট লেগের ফিল্ডারের হাতে। শ্রীলঙ্কানদের উল্লাসেও সাড়া দেননি আম্পায়ার। সাকিবও নড়েননি উইকেট থেকে। থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য মনিটরে তাকাতে দেখা গেল বল ফিল্ডারের হাতে জমা পড়ার আগে মাটি ছুঁয়ে গেছে।

তবে বেশিক্ষণ টেকেননি সাকিবও। ৪৪ বলে ২৬ রান করেই আশিথা ফার্নান্ডোর বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিয়েছেন টেস্টের সাবেক নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার।

লিটন না পারলেও এদিন সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুশফিক। দারুণ সংযমে রিভার্স সুইপ না খেলে ২৬ মাস পর সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ২৭০ বল মোকাবেলা করে মাত্র চারটি বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি করেন মুশফিক। আশিথা ফার্নান্ডোর বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক।

তবে সেঞ্চুরির পর আর স্থায়ী হয়নি মুশফিকের ইনিংস। এম্বুলদিনিয়ার বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান মুশফিক। হন্তারক সুইপ শটে জীবন দেবেন পন করেই যেন লেগ স্ট্যাপের ফুল লেংথের বলটি সুইপ করতে গিয়েছিলেন তিনি। ২৮২ বলে ১০৫ রান করে আউট হন মুশফিক। দলীয় রান তখন ৪৩৯। ততক্ষণে বাংলাদেশের লিড ৪২ রানের।

মুশফিকের বিদায়ের কিছুক্ষণ পর আউট হয়ে যান নাঈম হাসানও। ৫৩ বলে ৯ রান করে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার শিকারে পরিণত হন নাঈম। বরাবরের মতোই তেল এন্ডারদের ব্যর্থতায় লিড বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ তিন উইকেটে দলের খাতায় যোগ হয়েছে মাত্র ২৬ রান। তাতে চতুর্থ দিনের তৃতীয় সেশন পর্যন্ত ব্যাট করে বাংলাদেশ সব কয়টি উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে রান। প্রথম  ইনিংসে টাইগারদের লিড ৬৮ রানের।