এ প্রসঙ্গে দীপ্ত টিভির প্রযোজক কিশোর খন্দকার বলেন, ‘নিশো তো এবার কাজই করছেন না। ওটিটির কনটেন্টের জন্য সময় দিয়েছেন। তাহসান ভাইয়ের শিডিউলও নিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে ছিলেন, ফেরার পর সেভাবে কাজ করতে পারেননি। আবারও বিদেশে গেছেন। তাঁকে নিয়ে কাজ করা যায়নি।’
যেসব শিল্পীর নাটক দর্শকেরা বেশি দেখেন, তাঁদের নিয়ে আগ্রহ থাকে বিজ্ঞাপনদাতাদের। তাঁরা ঈদ অনুষ্ঠানমালায় অন্তত প্রথম তিন দিনের নাটকে দর্শক–চাহিদার শীর্ষে থাকা তারকাদের অনুষ্ঠানমালার প্যাকেজে দেখতে চান। এবার ঈদে এমন শিল্পীর নাটকের কিছুটা সংকট আছে, জানালেন বাংলাভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান তারেক আকন্দ। বাংলাভিশনে গত ঈদে ৪২টি নাটক প্রচারিত হয়েছিল। এবার সে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫–৪০টিতে।
তারেক আকন্দ বলেন, বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় অভিনেতা ঈদের নাটকের কাজ দেরিতে শুরু করেছেন। এ কারণে কিছু চ্যানেলে হয়তো কম নাটক প্রচারিত হতে পারে। কিন্তু বাংলাভিশনসহ অনুষ্ঠাননির্ভর বড় চ্যানেলগুলোর খুব একটা সমস্যা হয়নি। ঈদুল ফিতরে যেমন ছিল, এবারও নাটকের সংখ্যা একই বা কাছাকাছি থাকছে। হয়তো নিশো, অপূর্ব, তাহসান, মেহজাবীন, তৌসিফ, তানজিন তিশাদের নাটক কম থাকতে পারে।
তবে তারেক আকন্দ জানান, নাটকের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে বিকল্প শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছে কোনো কোনো চ্যানেল।
এমন একটি চ্যানেল এনটিভি। নাটকের সংখ্যা ঠিক রাখতে বিকল্প ভাবনা ভেবেছে এনটিভি। নতুনদের মধ্যে সম্ভাবনাময়দের গুরুত্ব দিয়ে দিয়ে বেশ কিছু নাটক নির্মাণ করেছে চ্যানেলটি। ঈদুল আজহায় ৩০টির মতো নাটক ও টেলিফিল্ম প্রচারিত হবে এনটিভিতে।
এনটিভির অনুষ্ঠানপ্রধান আলফ্রেড খোকন বলেন, ‘প্রথম সারির অভিনয়শিল্পীদের কেউ কেউ কম কাজ করেছেন। তাঁদের জন্য আমরা অপেক্ষা করিনি। নাটক নির্মাণ তো বন্ধ করা যাবে না। আমরা আরশ খান, জাহের আলভি, নিলয়, অর্ণব, সামিরা মাহিদের নিয়ে কাজ করেছি।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ওই অভিনয়শিল্পীদের হয়তো এখনো বিজ্ঞাপন মূল্য প্রথম সারির তারকাদের মতো নয় কিন্তু আস্তে আস্তে বাড়বে। তাঁদের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ বাড়ছে।
বিষয়টির সঙ্গে একমত টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সাজু মুনতাসীর, ‘প্রথম সারির প্রায় অর্ধডজন শিল্পী কাজ কম করার কারণে তাঁদের শিডিউল পাওয়া দুষ্কর ছিল। ফলে সব মিলিয়ে নাটকের সংখ্যা কিছুটা কমবে।’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাজু মুনতাসীর বলেন, ‘প্রথম সারির দুজন শিল্পীকে নিয়ে একটি খণ্ড ধারাবাহিক করতে চেয়েছিলাম। শিডিউল নেওয়ার পরও কাজটি করা যায়নি। তাঁদের পরের সারির নায়ক-নায়িকা নিয়ে কাজটি করেছি।’
তবে নতুনদের নিয়ে কাজ করার ইতিবাচক দিকও দেখছেন এই প্রযোজক নেতা, বিষয়টি ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো। এত এত নাটকের জন্য হাতে গোনা কয়েকজনের দিকে না তাকিয়ে নতুনদের সামনে আনতে হবে। শিল্পী ক্রাইসিসেরও সমাধান হবে।
গত ঈদুল ফিতরে ২৫টির মতো নাটক প্রচারিত হয়েছে অপূর্বর। এ অভিনেতার ধারণা, এবার সে সংখ্যা কমে ১২ থেকে ১৫টা হবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে অপূর্ব বলেন, ‘রোজার ঈদের পর মাসখানেক অসুস্থ ছিলাম। তা ছাড়া একটি টেলিভিশন ফিচার ফিল্ম করলাম। সেখানেও সময় দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার আমার নাটক কম হবে।’
তবে এই অভিনেতা শিল্পীসংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, এখন ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় হয়েছে। প্রচুর কাজ হচ্ছে। সুতরাং কয়েকজন শিল্পীর ওপর নির্ভর করে তো এত কাজ সম্ভব নয়। বেশি বেশি নতুন শিল্পী তৈরি করতে হবে।
ঈদুল আজহায় নিশোর মাত্র পাঁচ কি ছয়টি নাটক প্রচারিত হবে। তবে ঈদে তিনটি ওটিটি কনটেন্টে দেখা যাবে তাঁকে। নিশো বলেন, ‘এবার নাটকে কম সময় দিয়েছি। ওটিটির কাজের জন্য ছয় মাস আগে থেকেই সময় দিতে হয়েছে। আমি জানি, দর্শক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের চাহিদা থাকে। কিন্তু কিছু করার ছিল না। হয়তো ঈদের পর আবার নাটকের সংখ্যা বাড়তে পারে।’