কুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা। দুই দলের নেতারা একুশের চেতনা নষ্টের জন্য একে অপরকে দায়ী করেছেন।
এদিকে জাতীয় পার্টিসহ একে একে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান। সবারই প্রত্যাশা, একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবে বাঙালি।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোরের আলো ফোটার পরই প্রভাতফেরি করে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। এদিনও একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতে পিছপা হননি দল দুটির শীর্ষ নেতারা।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাসৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, বর্তমান সরকার একুশের চেতনা পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, আজ এমন একটি সরকার জনগণের ঘাড়ে চেপে বসে আছে, যারা একুশের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করে দিয়েছে। তারা ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। এ দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ থেকে ৭০ বছর আগে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে রাজপথে আত্মত্যাগ করেছিলেন। সেই সময় পাকিস্তান বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু বাংলা ভাষা এখনো সর্বস্তরে প্রচলন হয়নি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ছাত্রদের আত্মত্যাগের মতো নজিরবিহীন ঘটনা কোথাও ঘটেনি। ৭০ বছর আগে এ ভাষা আন্দোলনের যে চেতনা ছিল, তা এখন নেই।’
এদিকে, সকাল পৌনে ৯টার দিকে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল ৫২-র ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় বিএনপির মহসচিবের বক্তব্যের জবাব দিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, একুশের চেতনা বিএনপিই নষ্ট করেছে। একুশকে বিশ্বাস করে না বলেই বিএনপি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বাঙালির চেতনা বিএনপি ধারণ করে না, খালেদা জিয়া ধারণ করেন না। সুতরাং, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য আসলে তার বেলায় প্রযোজ্য। বাঙালির চেতনা, বাংলার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিএনপি ধ্বংস করেছে এবং একুশের চেতনা বিএনপিই নষ্ট করেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ১৯৫২ সালের এই দিনে যারা বাঙালির গলা টিপে ধরতে চেয়েছিল, যারা বাঙালির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, আমাদের ভাষার অধিকার হরণ করতে চেয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে সেদিন ছাত্র-জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং সেই প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে আমাদের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনে আমাদের প্রত্যয় হচ্ছে, যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
শীর্ষ এই দুই দল ছাড়াও প্রভাতফেরিতে অংশ নেন দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।