লেবুর ভিতর থেকে বাইরের খোসা পর্যন্ত পুরোটাই নানা গুণে ভরপুর। ওজন কমানো থেকে শুরু করে মুখের রুচি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালনে লেবুর রয়েছে অনন্য গুন। লেবু রোগ প্রতিরোধসহ সুন্দর করে চেহারা। এছাড়া হরেক রকম উপকারী ফল হচ্ছে লেবু।
লেবুর খোসা শরীরের ও ত্বকের যতেœর জন্য উপকারী। লেবুর খোসার মধ্যে অল্প মধু নিয়ে পুরো মুখে ভালো করে ঘষে নিন। হাত ও পায়েও ঘষে নিতে পারেন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও দাগ মুক্ত হবে।
খালি পেটে এক কাপ কুসুম গরম লেবুপানি পান করা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে আপনার শরীরের অনেক জীবাণু ধ্বংস হয়। লেবুর রস শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে লেবুর রয়েছে অনন্য গুন।
লেবুর পানি লিভারে থাকা পরিপাক সংক্রান্ত এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে খাবার সহজে হজম হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে লেবুর উপকারিতা অনস্বীকার্য। লেবু রক্তের অক্সিজেন পরিবহনের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়।
সাধারণত কিডনির পাথরগুলো ছোট আকারের হয় এবং তা মূত্রের সাথে বের হয়ে যায়। কিন্তু এই পাথর বড় হলে তা আমাদের মুত্রথলিতে জমা হয় এবং প্রচুর ব্যথার সৃষ্টি করে। কিডনিতে পাথর হওয়া ঠেকাতে লেবুর রসের উপকারিতা অপরিসীম। লেবুর রস আমাদের শরীরকে রিহাইড্রেট করে এবং কিডনিতে পাথর তৈরিতে বাধা দেয়।
লেবুর মধ্যে থাকে সাইট্রাস বায়োফ্ল্যাভোনয়েড, ভিটামিন সি এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস্ যা আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে লেবুর উপকারিতা অনেক। সকালে উঠে কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট ধ্বংস হয়। নিয়মিত এ পানীয় খেলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
গবেষকরা গবেষণায় পেয়েছেন, লেবুর ভেতরে এমন অনেক উপাদান আছে যা শরীরে টিউমার তৈরি হতে বাধা দেয়। ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবুর উপকারিতা অতুলীয়ন।
লেবু পানি শরীরের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়। লেবু দুশ্চিন্তা, হতাশা থেকে মুক্ত থাকতে সহায়তা করে। সজিবতাসহ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও লেবু ভালো একটি ফল।
এক টুকরো লেবুর খোসা নিয়ে এর ভেতরের অংশ দিয়ে ২ মিনিট দাঁত ঘষুন। এরপর কুলি করে ফেলে দিন। সাথে সাথে ফলাফল দেখতে পারেন।
সিঙ্কে বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন এবার একটি লেবুর খোসা দিয়ে ভাল করে ঘষে পরিষ্কার করে নিন। এটি সিঙ্কের সব রকম দাগ চলে যাবে। এমনকি সিঙ্ক নতুনের মত চকচকে হয়ে উঠবে।
পিপড়া ও পোকা মাকড় নিয়ে ঝামেলায় আছেন! আর চিন্তা নেই। লেবু আপনার চিন্তা দূর করতে পাশে আছে। লেবুর কয়েক টুকরা খোসা জানালার, দরজার কোনে বা এদের আসা যাওয়ার রাস্তায় রেখে দিন। দেখতে থাকুন ফলাফল। পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড় লেবুর গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না।
আর নয় বিষাক্ত কয়েল বা স্প্রে। রক্ত পিপাসু রোগ সৃষ্টিকারী মশা তাড়াতে লেবু রাখুন পাশে। লেবুটি দু’ভাগ করে কেটে নিন। কাটা অংশে লবঙ্গ গেঁথে দিন। রেখে দিন ঘরের একটি স্থানে। দেখুন লেবুর জাদুগিরি। মশা উধাও।
রোজমেরি এবং ভ্যানিলার সঙ্গে লেবু মিশিয়ে সহজেই ঘরের পরিবেশকে সতেজ করে তুলতে পারেন। ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে একটি বা দুটি লেবুর খোসা যথেষ্ট। লেবুর খোসা ফ্রিজের ভিতর রেখে দিন। দেখবেন ফ্রিজের ভেতরে দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেছে। কাটা আপেল বা অ্যাভোকাডোকে বাদামি রং হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে লেবু। এজন্য কাটা অংশটিতে লেবু মাখিয়ে রাখতে পারেন।
লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড। যা আপনার থালাবাসন চকচকে রাখতে সাহায্য করবে। থালা বাসন পরিষ্কার করার সময় ডিশ ওয়াশারের সাথে লেবুর খোসা দিয়ে থালাবাসন ঘষুন। এটি আপনার কাঁচের গ্লাস ও প্লেটও পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
একটি পাত্রে পানিতে লেবুর রস দিয়ে মাইক্রোওয়েভে ফুটাতে দিন। বলক আসা পর্যন্ত ফুটতে দেবেন। ওভেনের ভেতরে যেন পানি বলক আসে, তারপর একটি সুতি কাপড় দিয়ে মাইক্রোওয়েভের ভিতরটা পরিষ্কার করে ফেলুন। দেখবেন খুব সহজে ভিতরটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
লেবু শুধু খাদ্য নয়, জামা কাপড়ের ঘামের দাগ দূর করতেও প্রশংসনীয় কাজ করে। ঘামের দাগ উঠাতে অর্ধেক রস বের করে নেয়া লেবু ঘষে নিন। এরপর দাগের উপর বেকিং সোডা ছিটিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ঘামের দাগ আর নেই।
আসুন, রোগ প্রতিরোধের এবং অন্যান্য কাজের জন্য উপকারী লেবু প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় স্থান দেই।