রোজা পরবর্তী গরমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা

রোজার পরই শুরু হয়েছে গ্রীষ্মের দাবদাহ। কেউ কেউ এরই মধ্যে আবার শাওয়াল মাসের রোজাও রাখতে শুরু করেছেন। তারপরও আমরা জানি মুসলমানদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস শেষ হওয়ার পর প্রত্যেক মোমিন মুসলমানকে স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে চলতে হবে। এজন্য কিছু প্রয়োজনীয় পালনীয় নিচে উল্লেখ করা হলো।

এই গরমে রোজা পরবর্তীতে কোন কোন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে এবং তার প্রতিকার ঃ
দীর্ঘ দিন সিয়াম সাধনার পর প্রথম যে সমস্যা দেখা দিতে পারে সেটা হলো, নতুনভাবে খাওয়ার সঙ্গে শরীরকে অভ্যস্তকরণ। অর্থাৎ ইফতার, রাতের খাবার এবং সেহরীর পরিবর্তে বছরের অন্যান্য ১১ মাসের স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস। যেমনÑ সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাস্তা এবং রাতের খাবার। এই পরিবর্তনের কারণে কারো কারো ক্ষেত্রে বিশেষ অরুচি, ক্ষুধামন্দা, ঘুমের ব্যাঘাত, মাথা ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।

প্রতিকার :
মানসিকভাবে নিজেকে খাবার অভ্যাসের সঙ্গে এডজাস্ট করা। প্রথমদিকে একটু সমস্যা হলেও পরবর্তীতে মানিয়ে যাবে। বেশি অরুচি বা ক্ষুধামন্দা হলে যা খেতে ইচ্ছে করে সেটা খাবেন। কম কম করে বার বার খাবেন।
ঘুমের বেশি ব্যাঘাত হলে প্রথমদিকে ঘুমের জন্য কোন ট্যাবলেট চিকিৎসকের পরামর্শমতো এবং মাথা ব্যথার জন্য বেদনা নাশক প্যারাসিটামল গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রচুর পানীয় এবং ফলের রস গ্রহণ ও শারীরিক পরিশ্রম এ সমস্ত সুবিধাগুলো দূর করতে সাহায্য করে।

খাবারের সময়ের পরিবর্তনের কারণে অনেকের পেটে ব্যথা, এসিডিটি, চুকাঢেঁকুর, পেপটিক আলসারের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। এগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ যেমন এন্টাসিড গ্রহণ, সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ধুমপান, সিগারেট, নেশা জাতীয় দ্রব্য এবং চা-কফি কম খাওয়া বা একদম না খেলে ভালো।
বেশি তৈলাক্ত, মশলাযুক্ত, চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে অনেকের পেটব্যথা, পাতলা পায়খানা, বদহজম ইত্যাদি হতে পারে। এজন্য এ সমস্ত খাবার অল্প পরিমাণে খাওয়া বাঞ্ছনীয়। বেশি অসুবিধা হলে ওরাল স্যালাইন ও তরল খাবার খাওয়া যেতে পারে। খুব বেশি ডাইরিয়া বা ডিসেন্ট্রি হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করতে হবে।

বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিনোদন, পার্ক, মেলায় খাওয়ার কারণে শরীর থেকে বেশি পরিমাণ ঘাম নির্গত হওয়ার কারণে অবসাদগ্রস্ততা, মাথাঘোরা, দুর্বল লাগা, প্রসাব কম হওয়া এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এজন্য প্রচুর পরিমাণে পানীয় গ্রহণ, তাজা ফলমূলের রস গ্রহণ, ওরাল স্যালাইন গ্রহণ করতে হবে।
ঠা-া ও ছায়াযুক্ত জায়গায় অবস্থান করতে হবে। ছাতা, টুপি, চশমা ব্যাবহার করতে হবে এবং যথা সম্ভব গরম এড়িয়ে চলতে হবে।

এসময়ে খাওয়ার পরিমাণ একটু বেশী হয় বিশেষত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য যেমনÑ সেমাই, পায়েস, ফিরনী, জর্দা, পোলাও, কোর্মা, রোস্ট, আইসক্রিম ইত্যাদি। এজন্য যারা ডায়াবেটিস ও ব্লাডপ্রেসারে আক্রান্ত এ সমস্ত রোগীদের এগুল খাওয়ার ব্যপারে একটু সাবধান থাকতে হবে। বেশি খাওয়া হলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিনের ডোজ বা খাওয়ার বড়ির ডোজ চিকিৎসকের পরামর্শমতো এডজাস্ট করতে হবে।
ব্লাড প্রেসার রোগীরা অধিক লবণ, অধিক চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন এবং ব্লাড প্রেসার বয়স, লিঙ্গ ও উচ্চতা অনুযায়ী ওষুধ সহযোগে, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করবেন।
সর্বোপরি এসময়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জারি করা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, গরমের কারনে খুব বেশী অসুস্থ বোধ করলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে অবশ্যই কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেই।