দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) জয়লাভ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ২০১৬ সালের চেয়ে এবার দ্বিগুণ ইউপিতে জয় পেয়েছে তারা। নির্বাচনে স্বতন্ত্ররা ১৭৮১টিতে জয়লাভ করেছে। গতবার জিতেছিল ৯ শতাধিক ইউপিতে।
এদিকে গতবারের চেয়ে এবার খারাপ ফল করেছে আওয়ামী লীগ। গতবার ৬৫ শতাংশ ইউপি নৌকার দখলে থাকলেও এবার ৫৩ শতাংশ ইউপিতে জয়লাভ করেছে দলটির মনোনীত প্রার্থীরা। ১২ শতাংশ ইউপি হাতছাড়া হয়েছে নৌকা প্রার্থীদের। তবে প্রতীক ছাড়াই ভালো ফলাফল করেছে বিএনপির প্রার্থীরা। নির্বাচন বর্জনকারী দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে ভোট করে চমক দেখিয়েছে। গতবার ৩৬৭টি ইউপিতে জয়ী হয় ধানের শীষের প্রার্থীরা। এবার প্রায় সাত শতাধিক ইউপিতে জয় পেয়েছে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ইউপির ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গত সোমবার সপ্তম ধাপের ইউপি ভোটের মধ্যদিয়ে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে জমজমাট নির্বাচন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। এবারের ভোটে প্রাণহানি ও বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার হার সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রায় দেড় শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে ৮৪ জনের প্রাণহানি হয়। এবার ৩৬৯ জন চেয়ারম্যান জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হন। এছাড়া প্রায় দেড় হাজার মেম্বার ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হন। সাত ধাপে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১০৬টি ইউপিতে ভোট সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ৪০৫টি ইউপিতে ইভিএমে ভোট করে কমিশন। অনেক জায়গায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ ২ হাজার ১৭৭টি (৩৬৭ জন চেয়ারম্যান ভোট ছাড়াই নির্বাচিত), স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১ হাজার ৭৮১টিতে জয়লাভ করেছে। নৌকার দখলে ৫৩ শতাংশ ইউপি। অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ ইউপিতে জয়ী স্বতন্ত্ররা। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি-জাপা ৪৪টি, জাতীয় পার্টি-জেপি ৯টি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৭টি ইউপিতে জয়ী হয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এখন পর্যন্ত সহিংসতা ও কেন্দ্র স্থগিত থাকার কারণে অর্ধশতাধিক ইউপির ফলাফল আটকে আছে। এবার প্রায় ৭০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে। স্বতন্ত্রদের বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
২০১৬ সালে প্রথম বার অনুষ্ঠিত দলীয় প্রতীকে ইউপির ভোটে আওয়ামী লীগ তুলনামূলক অনেক ভালো করেছিল। তত্কালীন ছয় ধাপে মোট ৪ হাজার ১০৪টি ইউপিতে ভোট হয়। সেই সময় ২ হাজার ৬৫২টি ইউপিতে নৌকা জয়লাভ করে। কিন্তু এবার ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক ইউপির জয় হাতছাড়া হয়ে গেছে দলটির। সেই সময়ে ৬৫ শতাংশ ইউপি নৌকার প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি জয়ী হয়েছিল ৩৬৭টি ইউপিতে। দ্বিতীয় বার অনুষ্ঠিত দলীয় প্রতীকের ইউপি ভোট বিএনপি বর্জন করলেও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত। ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হয়।
উল্লেখ্য, দেশে মোট ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪ হাজার ৫৭৪টি। ৪৩৬টি ইউনিয়নে সীমানা নির্ধারণ ও মামলা থাকায় সেগুলোতে নির্বাচন করা যাচ্ছে না। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আটটি ইউপিতে ভোট হবে। এর পর আনুষ্ঠানিকভাবে ইউপি ভোট নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন