নতুন বছরে দেশের রাজনীতিতে বেশ উত্তাপ ছড়াবে বড় দুদলের নানা কর্মসূচি। ২২তম জাতীয় সম্মেলন এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছর তৃণমূল পর্যন্ত দলকে আরও সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলতে চায় আওয়ামী লীগ। এছাড়া যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থেকে রাজনীতির মাঠ বিরোধীদের দখলে নিতে দেবে না দলটি। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসা এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সারা দেশে চলমান সমাবেশের পর নতুন কর্মসূচি দেবে। ধাপে ধাপে আরও কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার পরিকল্পনা দলটির
নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে রাখবে আ.লীগ
হাসিবুল হাসান
চলে গেল নানা আলোচনা-সমালোচনার বছর ২০২১। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রমনের ঝুঁকির মধ্যেই শুরু হলো আরেকটি বছর। নতুন বছরেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই পথচলা শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের। ২২তম জাতীয় সম্মেলন এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছর তৃণমূল পর্যন্ত দলকে আরও সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলতে চায় ক্ষমতাসনীরা। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাও তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এর মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখার পরিকল্পনা করেছে দলটি। এছাড়া যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থেকে রাজনীতির মাঠ বিরোধীদের দখলে নিতে দেবে না আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে নতুন বছরের শুরু থেকেই সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে ক্ষমতাসীন দলটিকে। এ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কয়েকটি সহযোগী সংগঠনকেও সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজাতে চায় তারা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়া সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যস্ত থাকবে তাদের তৃণমূল গোছানোর কাজে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন-২০২২ সালেও দেশের চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চান তারা। একইসঙ্গে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রম মোকাবিলা, টিকা কার্যক্রম আরও এগিয়ে নেওয়া এবং যে কোনো ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সতর্ক থাকবেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, নতুন বছরেও আমরা আমাদের সফলতা ও অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চাই। সেই সঙ্গে বছরব্যাপী আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন, নতুন কমিটি গঠনের চ্যালেঞ্জ তো থাকছেই। আমরা আশা করছি, করোনা পরিস্থিতি ভালো থাকবে এবং আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাজগুলো এগিয়ে নিতে পারব। এর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের আগামী জাতীয় সম্মেলন এবং একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করব। বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক দল শন্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতেই পারে। কিন্তু তারা যদি অতীতের মতো অগ্নিসন্ত্রাস বা হামলা-ভাঙচুরের চেষ্টা করে তাহলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
২০২১ সালের প্রায় পুরোটা সময় পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল আওয়ামী লীগ। ২০২২ সালও শুরু হচ্ছে সেই ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই। ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপের নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচন। এ নির্বাচনে ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয়ভাবে গঠন করা হয়েছে সমন্বয় টিমও। ১৬ জানুয়ারি এ সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনেও অতীতের মতো জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।
২০২৩ সালে শেষ হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ। এরপরেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে। দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে তৃণমূল পর্যন্ত সু-সংগঠিত করার পাশাপাশি ২০২২ সালে নির্বাচনকেন্দ্রিক অন্যান্য প্রস্তুতিগুলোও এগিয়ে নেবে দলটি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু না হলেও ভেতরে ভেতরে এই কাজ এগিয়ে রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি খোঁজখবর নেবেন বর্তমান দলীয় এমপি ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে।
পাশাপাশি নির্বাচনে আগে জোটের মেরুকরণও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচনের আগের এ বছরে এ বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরই ইশতেহার তৈরির প্রাথমিক প্রস্তুতির নির্দেশনা দলের নেতাদের দিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ বছর সেই কাজ আরও গতিশীল করবেন ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনেও জোর দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, আমরা অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিনে কাজ করব। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আর ২ বছর বাকি আছে। আমাদের প্রস্তুতি আছে, প্রস্তুতি চলছে। আমাদের টিমগুলো এ বিষয়ে কাজ করছে, আগামীতেও করবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ২০২২ সালে শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাব। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় কাজ করব। এটাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য।
২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে থেকেই তৃণমূল পর্যন্ত দল গোছানোর কাজ শুরু করেছিল তারা। সম্মেলনের পরেও এই কাজ অব্যাহত ছিল। কিন্তু মাঝে করোনার কারণে কয়েক বার দল গোছানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। করোনার সংক্রমণ কমার ফাঁকে বা সীমিত পরিসরে সারা দেশের বেশ কিছু জেলা-উপজেলার সম্মেলন হয়েছে। নতুন বছরে দল গোছানোর কাজ আরও গতি পাবে। আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছরের ডিসেম্বরে। দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন-নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় সম্মেলনের আগেই সারা দেশের মেয়াদোত্তীর্ণ বাকি জেলা-উপজেলা সম্মেলনের কাজ শেষে করতে চান তারা।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির কর্মকাণ্ড নিয়ে সতর্ক ক্ষমতাসীনরা। তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেনই তারা। নির্বাচনের আগে মাঠ গরম করে অস্থিতিশীল পরিস্থতি তৈরি করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে আগের মতোই কঠোর ও সতর্ক অবস্থান অব্যাহত রাখবে দলটি। এজন্য ২০২২ সালের শুরু থেকেই সব দিক দিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। গুজব-অপপ্রচারের জবাব দিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে লক্ষাধিক অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট। কেউ যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য কঠোর নজদারিতে থাকবে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো। নির্বাচনের আগে সরকার ও দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধেও সতর্ক থাকবে দলটি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন-সরকার পতন, আন্দোলন এসব মুখরোচক শব্দ বৃষ্টি বর্ষণ করে কোনো লাভ নেই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। এসময় অলিগলি পথে না হেঁটে নির্বাচনমুখী হওয়ার জন্য বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন মেয়াদোত্তীর্ণ। সংগঠনগুলো হলো-যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ। এছাড়া ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগও মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া দীর্ঘদিন আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। মেয়াদ শেষের পরেই সম্মেলনের সিদ্ধান্ত থাকলেও করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ সংগঠনগুলোর সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। বর্তমানে মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সহযোগীরাও সারা দেশে শুরু করেছে তৃণমূল গোছানোর কাজ। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা বলছেন-সংগঠনকে দীর্ঘ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ রাখার সুযোগ নেই।
কঠোর আন্দোলনের পথে বিএনপি
তারিকুল ইসলাম
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে রাজপথে আরও সোচ্চার হতে তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। ৩২ জেলায় সমাবেশ শেষে বাকি জেলায়ও একই কর্মসূচি পালনের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিকে যোগ করে কঠোর আন্দোলনে যেতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সমাবেশের পর আবারও কর্মসূচি দেওয়া হবে। নতুন বছরজুড়ে ধাপে ধাপে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার পরিকল্পনা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, দলীয় প্রধানের মুক্তি এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের আন্দোলন এক ও অভিন্ন। যা হবে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’র আন্দোলন।
নীতিনির্ধারকদের আরও অভিমত-খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবির কর্মসূচিতে মানুষের সমর্থন রয়েছে। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি তা প্রমাণ করে। সরকারের একরোখা মনোভাবকে ভালোভাবে নিচ্ছে না মানুষ। তাই সরকার যতদিন সুচিকিৎসার দাবি না মানবে, ততদিন তারা মাঠের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। নেতাদের দাবি-খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়ে মানুষের সহানুভূতি তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের প্রতি ক্ষোভ ও বিরক্তি বাড়ছে। এটাকে মাঠে নামার সুযোগ হিসাবেও নিয়েছেন তারা। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারেনি, কিন্তু খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে পারছে।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি করছি। যাতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যাপারে সরকার সব বাধা-প্রতিবন্ধকতা দূর করে। আশা করি, এর মধ্যেই সরকার কর্ণপাত করবে, না হয় আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। প্রয়োজন হলে রোডমার্চ, ট্রেনমার্চ হবে। এটার শেষ পর্যন্ত দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে ষড়যন্ত্র শুরু করে এদেশ থেকে রাজনীতিকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করে যাচ্ছি। আমরা এ অবৈধ সরকারের পদত্যাগ চাই। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আমাদের লড়াই আরও বেগবান হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এ লড়াই অতি অল্প সময়ের মধ্য দিয়ে এক দুর্বার গণআন্দোলনে পরিণত হবে। রাজপথেই ফয়সালা হবে।
১৩ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার চিকিৎসকরা বলেছেন, জটিল রোগ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত তিনি। কয়েক দফা রক্তক্ষরণের কারণে তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। খালেদা জিয়ার পরিবার ও তার দল বিএনপি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশের হাসপাতালে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো আবেদন-নিবেদনে সরকারের সাড়া না দেওয়ায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নামে বিএনপি। খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন, সমাবেশ, গণঅনশনসহ জেলা প্রশাসকদের স্মারকলিপি কর্মসূচি পালন করেছেন। এখন জেলায় জেলায় সমাবেশ কর্মসূচি চলছে।
দলটির দুজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, এখন পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই বিএনপির। সমাবেশ কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হয়েছে। যার শেষও দেখা হবে। এ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ভাবছে না দল। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি দেওয়া হতে পারে। দেশের পরিস্থিতি, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিএনপির সামনে ‘ডু অর ডাই’ মনোভাব। এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে যে কোনো সময় বড় ধরনের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামার পরিকিল্পনাও রয়েছে।
তৃণমূল নেতারা জানান, মূল জিনিসটা হলো নেতাকর্মীরা তো দাঁড়াতে পারছিলেন না। দাঁড়াতে দিত না। সে জায়গায় সমাবেশ কর্মসূচির মাধ্যমে তারা দাড়াচ্ছেন। তাদের (নেতার্মীদের) ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারছেন। এ ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিএনপি লাভবান। আগামীতে কেন্দ্রের যে কোনো সিদ্ধান্ত এখন সফল করতে প্রস্তুত রয়েছে তৃণমূল।
ঢাকা মহানগরের একাধিক নেতা জানান, জেলার নেতারা বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন ঢাকা মহানগরের ব্যর্থতার কারণে অতীতের আন্দোলনের সফলতার ফসল ঘরে আনা যায়নি। তবে সবকিছু বিবেচনা করে এবার মহানগরের কমিটি করা হয়েছে রাজপথে আন্দোলন করা নেতাদের দিয়ে। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা ইতোমধ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক কর্মিসভা শেষ করেছেন। সম্মেলন করে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি দেবেন। ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এসব প্রক্রিয়া চলছে। যাতে আগামী দিনের আন্দোলন সফল করা যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের আগামী দিনে পথ-‘ডু অর ডাই, গণতন্ত্রের মুক্তি চাই। গণতন্ত্র মুক্ত করব। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আর তার পূর্বের শর্ত হচ্ছে সরকারের পতন। এক দফার আন্দোলনেই সুরাহা হবে। জনগণের আন্দোলন কখনোই বৃথা যায় না। আমাদের আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। আমাদের আন্দোলন হবে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এ বছর হবে পরিবর্তনের, জনগণের গণতান্ত্রিক ভোটের অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে দুঃশাসন বদলে দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রেখে তার উন্নত চিকিৎসার প্রশ্নে সরকার যে অমানবিক অবস্থান নিয়েছে, সেখান থেকে নাড়াতে যতদূর যাওয়া দরকার, বিএনপি ততদূর পর্যন্ত যাবে। কারণ, খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির চেয়ারপারসনই নন, তিনি এ মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী শক্তির মূল নিয়ামক এবং ঐক্যের প্রতীক।
তিনি বলেন, কর্মসূচির পাশাপাশি দল পুনর্গঠনও চলবে। কারণ এ পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলা শাখার পাশাপাশি থানা, উপজেলা-পৌরসহ সব পর্যায়ের ইউনিট পুনর্গঠনেরও কাজ চলছে।