পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে রাজধানীতে পশু বেচাকেনা। এবার দুই সিটি করপোরেশনের স্থায়ী দুই হাটসহ ২১টি হাট বসছে বিভিন্ন এলাকায়। করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ ৪৬টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। যারা এই হাট ইজারা পেয়েছেন বা পশু কিনতে হাটে যাবেন, তাদের এই শর্তগুলো মেনে বেচাকেনা করতে হবে। আর ইজারাদার এই শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের ইজারা বাতিলসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
এ বিষয়ে উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ঢাকা উত্তরে একটি স্থায়ী হাটসহ মোট ১০টি হাট বসবে। এগুলো ঈদের চার দিন আগেই বসবে। ঈদের দিনও হাট চলবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘ডিএসসিসিতে এ বছর একটি স্থায়ীসহ ১১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। ৪৬টি শর্ত জুড়ে দিয়েছি। এগুলো মেনে হাট চালাতে হবে।’
রাজধানীর যেখানে বসছে হাট
এবার ১৩টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা তিনটি হাট বাতিল করে ১০টি জায়গায় অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলো হলো—হাজারীবাগ এলাকার ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট-সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ, সেকশন ১ ও ২-এর খালি জায়গা, গোলাপবাগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মার্কেটের পেছনের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজসংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা এবং লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা। এছাড়া সারুলিয়ায় বসবে স্থায়ী পশুর হাট।
অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ৯টি এলাকায় অস্থায়ী হাট বসানো হচ্ছে, সেগুলো হলো: বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই, সেকশন-৩-এর খালি জায়গা, কাওলা শিয়ালডাঙ্গাসংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদনগর হাউজিং (আবাসিক) প্রকল্পের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) অস্থায়ী পশুর হাট, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কসংলগ্ন রাজধানী হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও বছিলা গার্ডেন সিটির খালি জায়গা এবং ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন ৩০০ ফুট সড়কসংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল লিমিটেড ও যমুনা হাউজিং কোম্পানি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন খালি জায়গায় পশুর হাট বসছে। এছাড়া গাবতলীতে বসবে স্থায়ী পশুর হাট।
হাটগুলোতে ইজরাদার ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের যেসব শর্ত মানতে হবে এর মধ্যে রয়েছে:খোলামেলা জায়গায় হাট বসাতে হবে। হাট বসানোর আগে মাস্ক, সাবান, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করবেন ইজারাদার। তাকে পানি ও সাবানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিরাপদ বর্জ্য নিষ্কাশনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। হাটের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কমিটির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কমিটির সবার ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার করা ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। হাটে প্রবেশের সময় গ্রাহক চাইলে তাকে বিনা মূল্যে মাস্ক দিতে হবে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। পর্যাপ্ত পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পশুর বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। একটি পশু থেকে আরেকটি পশু এমনভাবে রাখতে হবে, যেন ক্রেতাদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব থাকে। ভিড় এড়াতে মূল্য পরিশোধ ও হাসিল আদায় কাউন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পশু ঢোকাতে হবে।
প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশনের এক বা একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বেচ্ছাসেবী মেডিক্যাল টিম গঠন করে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। টিমের কাছে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ডিজিটাল থার্মোমিটার থাকতে হবে। তাত্ক্ষণিকভাবে রোগীকে আলাদা করার জন্য হাটে একটি আইসোলেশন ইউনিট রাখতে হবে। হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক ক্রেতাকে প্রবেশ করতে দিতে হবে। একটি পশু কিনতে একসঙ্গে দুজনের বেশি হাটে ঢুকতে পারবে না। হাটে ঢোকার আগে ও বের হয়ে ক্রেতাকে হাত ধুতে হবে। সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা ক্রেতাকে হাটে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। শিশু ও বৃদ্ধদেরও ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
আরও কিছু শর্তঅস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট ঈদের দিনসহ মোট পাঁচ দিন চালু থাকবে। এ হাটে বিক্রীত পশুর মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ হাসিল আদায় করা যাবে। প্রতিটি হাসিল বুথে ধার্যকৃত হার স্পষ্টভাবে লিখে দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট নকশা ও তপশিলের সীমানার বাইরে হাট বসানো যাবে না।
হাইকোর্টের নির্দেশনামতে, রাস্তায় ও খেলার মাঠ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পশুর হাট বসানো যাবে না। রাস্তায় খুঁটি বসানো যাবে না। শর্তগুলোর কোনো একটিও যদি মানা না হয়, তবে ইজারা বাতিলসহ ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।