ডা. মাও. আবুল কাশেম :
শিশু জন্ম হওয়ার পর শুরু হয়ে যায় শিশুর হক আদাইয়ের পালা, আর শিক্ষিত সচেতন মায়েরা প্রথম জন্মের পরই বুকের ‘শাল দুধ’ খাওয়ায়। কারন আল্লাহ মানুষের রিজিক রেখেছে পুত ও পবিত্র ভাবে। তাই একজন শিশু জন্ম নেওয়ার পর মায়ের বুকের দুধের যে দুধ তাহা হলো ‘শাল দুধ’ আর এই দুধের মধ্যে রয়েছে শিশুর শারীরের সমস্ত শক্তি ও জীবনী শক্তিকে শক্তিশালী করার কার্যক্ষমতা।
শুধু তাই নয়, আরো আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই জন্যই আল্লাহ শিশুর রিজিক তার জন্মের পূর্বেই পবিত্র ভাবে রেখে দিয়েছেন, আর তা শুরু হয় মায়ের স্তনদানের মধ্য দিয়ে। অনেকে জানেনা যে শিশু জন্মের পর স্তন থেকে হলুদা ভাব, যে ঘন পদার্থ বের হয় তা শিশুর শ্রেষ্ট খাবার।
আর এই দুধকে বলা হয় ‘শাল দুধ’ বা কলোস্ট্রম। জানা গেছে শত করা প্রায় ৬০ শতাংশ নারী জানেনা যে এই ‘শাল দুধ’ এবং শিশুর শরীরে গঠনের সব চেয়ে প্রয়োজনীয় পদার্থ।
গ্রামের নারীরা এই ব্যাপারে অসচেতন বলেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। যে সমস্ত মায়েরা তাদের সন্তানকে শাল দুধ ও বুকের দুধ খাওানো থেকে কোন প্রকার বঞ্চিত করেনা। ঐ সমস্ত শিশুদের রোগ ব্যাধির হওয়ার আশংকা শত করা প্রায় ৮০ ভাগ কমে যায়। বিজ্ঞানিরা বলে শিশু বেড়ে উঠার সব ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান যেসব ভিটামিন, ক্যালরি, সুগার, আয়রন, ম্যাগেশিয়াম, পটাশিয়াম রয়েছে মায়ের দুধে। অনেকে বলেন মায়ের দুধে কি আছে ? তার উত্তরে বলব, মায়ের দুধে বিশ নাই। শিশুর আদর্শ খাবার ও নিরাপদ খাদ্য হচ্ছে মায়ের দুধ।
নবজাতক শিশুকে বয়স অনুযায়ী নিদিষ্ট সময় বুকের দুধ কি ভাবে খাওয়াবেন তা নিম্মে তুলে ধরা হলো :
শিশুর জন্মের পর ‘শাল দুধ’ খাওয়াবেন। ১ম দিন শাল দুধ খাওয়ানোর পর ২০/২৫ ফোটা বিশুদ্ধ জল ২/৩ ঘন্টা পর পর খাওয়াবেন।
২য় দিন ও ৩য় দিন প্রতি স্তনে ২ থেকে ৩ মিনিট করে ২টি স্তনে মোট ৫ মিনিট খাওয়াবেন প্রতি তিন ঘন্টা অন্তর যদি শিশুর পেট না ভরে তাহলে ৩ মিনিট করে ২টি স্তনে ৬ মিনিট খাওয়াবেন ৩ ঘন্টা অন্তর।
৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ট দিনে প্রতি স্তনে ৫মিনিট করে ২টি স্তনে ১০ মিনিট খাওয়াবেন ৩ ঘন্টা পর পর।
৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম দিনে প্রতি স্তনে ৭ মিনিট করে ২টি স্তনে ১৫মি খাওয়াবেন।
১১ তম দিন থেকে ১মাস পর্যন্ত প্রতি স্তনে ১০ মিনিট করে ২টি স্তনে মোট ২০ মিনিট খাওয়াবেন তাহা ৩ ঘন্টা পর পর।
১-৩ মাস পর্যন্ত প্রতি স্তনে ১৫ মিনিট করে ২টি স্তনে মোট ৩০ মিনিট খাওয়াবেন এবং ৩ ঘন্টা পর পর।
৪ মাস থেকে ৬মাস পর্যন্ত প্রতি স্তনে ২০মিনিট করে ২টি স্তনে মোট ৪০মিনিট প্রতি ৩ ঘন্টা পর পর।
৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের সাথে অতিরিক্ত কিছু কিছু শক্ত খাওয়া খাওয়াবেন।
৩/৪ ঘন্টা পর পর শক্ত খাওয়া দিবেন এবং বুকের দুধ খাওয়াবেন। উক্ত নিয়মে মায়ের দুধ খাওয়াবেন এবং মায়ের দুধ খাইলে মা ও সন্তানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গভির হয়। এটি এক প্রাকৃতি সম্পদ, যা জোগাড় করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয় না এবং কোথাও যেতে হয়না। সন্তান চাইলে মা তা দিতে পারে।
বুকের দুধ খেলে মা এবং সন্তানের মধ্যে এক সম্পর্ক থাকে, যাহা কখনও ভুলে না। দুধ সন্তানকে খাওয়াইয়া মা তৃপ্তি পায়। মায়ের তৃপ্তি বা সন্তষ্টি দুই জায়গায়। প্রথমত মা হওয়া আর দ্বিতীয়ত সন্তাকে বুকের দুধ দেওয়া, বুকের দুধকে বলা হয় মেধা বা বুদ্ধিবর্দ্ধক খাদ্য, গবেষনা এবং মায়ের দুধের উপকারিতা দেওয়া হল।
১। মায়ের দুধ বিশুদ্ধ বা জীবানু মুক্ত, সুতরাং আলাদা করে জীবানু মুক্ত করার প্রয়োজন নাই।
২। শিশুর উপযোগী পরিমান মত প্লোটিন, কাবোহাইড্রেট ফ্যাট ও অন্যান্য ভিটামিন আছে।
৩। সু-স্বাদু সুসম ও সহজ পাচ্য যা সহজেই হজম করতে পারে।
৪। শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
৫। আল্লাহ শিশুর খাদ্য তৈরী করে রাখেন মায়ের বুকে।
৬। ঠান্ডা বা গরম করার প্রয়োজন নেই কেননা মায়ের দুধ শিশুর শরীরের সহ্য হয় এমন ভাবে আল্লাহ তৈরী করেন।
৭। মায়ের দুধ খাওয়ার পর পেট-খারাপ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
৮। কোথাও আসা যাওয়া করলে দুধের পাত্র ভরে নেওয়ার কোন প্রয়োজন নাই।
৯। মায়ের যদি অসুখ হয় তখন ও দুধ খাওয়ানো যায়।
১০। মায়ের দুধ খাওয়ার পর শিশুর কান্না কমে এবং ঘুমিয়ে পড়ে।
১১। শিশুর পেট খারাপ হলেও মায়ের দুধ খেতে পারে।
১২। মায়ের দুধের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়না।
শিশু জন্ম নেওয়ার কিছুক্ষন পর বুকের দুধ খাওয়াবেন শিশু জন্মের পর ‘শাল দুধ’ খাওয়াবেন। শিশু প্রসবের পর বুকের দুধ তৈরী হতে প্রায় ১৮-২৪ ঘন্টা সময় লাগে এবং ঠিক মতো দুধ আসতে ৪/৫ দিন সময় লাগে। ৪/৫ দিন পর আস্তে আস্তে বুকের দুধ আসতে থাকে এর সাথে সাথে মায়ের বুকের দুধ শিশুকে খাওয়াবেন।
লেখক, সহকারী অধ্যাপক : নোয়াখালী এম.এ রহমান হোমিও প্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, চৌমুহনী
সদস্য : প্রদীপ্ত লেখক ফোরাম