মাদক, কিশোর গ্যাং, টিকটক-সমাজের এ তিন ব্যাধিতে বিপর্যস্ত নতুন প্রজন্মকে ধংস করতাছে।

মাদক, কিশোর গ্যাং, টিকটক-সমাজের এ তিন ব্যাধিতে বিপর্যস্ত নতুন প্রজন্ম। মাদকের ভয়াবহতায় যুব সমাজ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলোকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দপ্তরগুলোকে সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। সব অপরাধের মূলে মাদক। আর টিকটক-লাইকির অপব্যহার সমাজে নতুন নতুন অপরাধের জন্ম দিচ্ছে। এ তিন সমস্যা সমাধানে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন।

শনিবার ‘সমাজের তিন ব্যাধি (মাদক, কিশোর গ্যাং ও টিকটক) রোধে করণীয়’-শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। যুগান্তর এ বৈঠকের আয়োজন করে। পত্রিকাটির কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বক্তারা আরও বলেন, তদন্তের দুর্বলতা সব বিচারকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। সমস্যা সমাধানে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও ‘স্মার্ট’ হওয়ার পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি অভিভাকদের আরও সচেতন হওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন।
যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং যুগান্তরের প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রক বোর্ডের উপদেষ্টা সদস্য অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন-যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান একেএম হাফিজ আক্তার, এলিট ফোর্স র‌্যাপিড আকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ূয়া, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ এবং যুগান্তরের উপসম্পাদক আহমেদ দীপু। এছাড়া অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহসানুল জব্বার। গোলটেবিল বৈঠকে সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন যুগান্তরের উপসম্পাদক এহসানুল হক বাবু। উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের সহকারী সম্পাদক দেওয়ান আসিফ রশীদ ও বিশেষ প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজান মালিক।

গোলটেবিলে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম এমপি বলেন, মাদকের ভয়াবহতায় যুবসমাজ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পরিবারের কোনো একজন সদস্য মাদকাসক্ত হলে গোটা পরিবারের সুখ-শান্তি বলতে আর কিছুই থাকে না। তাই মাদকের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বড় ভ‚মিকা পালন করতে পারে। তারা কাজও করছে। কিন্তু তাদের কাজকে জনগণের কাছে আরও দৃশ্যমান ও কার্যকর হতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিটি পরিবার থেকে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে কাদের সঙ্গে চলাফেরা করছে, রাতে যথাসময়ে ঘুমাচ্ছে কিনা, গোপনে কার সঙ্গে কথা বলছে- এসব বিষয়ে অভিভাবকদের প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখতে হবে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাকালে এমনিতেই ছেলেমেয়েদের রুটিন এলোমেলো হয়ে গেছে। তারা রাতে না ঘুমিয়ে মোবাইল ফোনে বাজে সময় পার করছে। এ বিষয়টি অভিভাবকদের মনিটরিং করতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে। পরিবারের নৈতিক শিক্ষাই হলো সন্তানদের বেসিক শিক্ষা। পরিবার থেকে শিশুরা যে শিক্ষা নেয় তা সারা জীবন চালু থাকে।
সালমা ইসলাম এমপি বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই কিশোর গ্যাংয়ের কথা শুনছি। গণমাধ্যমে এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিশোর গ্যাং সদস্যদের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ খুনের ঘটনাও ঘটেছে। কিশোর গ্যাংয়ের আদ্যোপান্ত নিয়ে যুগান্তরে বেশকিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যরা নানা অপকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তাদের অনেক ‘বড় ভাই’ এবং গডফাদার বা মাফিয়া রয়েছে। এ মাফিয়া চক্রকে খুঁজে বের করতেই হবে। নিশ্চয়ই এতদিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাফিয়াদের বিষয়ে বিস্তর তথ্য-উপাত্ত চলে এসেছে। আমার মতে-মাদক, কিশোর গ্যাং এবং টিকটক-লাইকিতে জড়িয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পেছনে প্রথমত সংশ্লিষ্টদের অভিভাবকরা দায়ী। অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগই তাদের বেশি বেপরোয়া করে তুলছে। যেসব গডফাদারের কারণে নতুন প্রজন্ম বেপরোয়া হয়ে উঠছে তাদের কোনো ভাইকেই ছাড় দেওয়া যাবে না। কারণ, কিশোর অপরাধীরা ধরা পড়লে ওইসব গডফাদাররাই তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার তদবির করে। যারা অপরাধীদের পক্ষে তদবির করে তারাই বড় অপরাধী। তাই সব ক্ষেত্রেই আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। প্রশাসনকে আরও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, টিকটক ভিডিও সমাজে এখন বড় ডিজিটাল সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। যারা এটি ব্যবহার করে তারা হয়তো এর পক্ষে নানা যুক্তি উপস্থাপন করে। এর পক্ষে সাফাই গায়। কিন্তু আমি বলব, প্রত্যেক জিনিসের ভালোমন্দ দুটি দিকই থাকে। যেমন আমরা ধারালো ছুরি দিয়ে ফল কাটতে পারি। এটা একটি ভালো কাজ। আমরা সেটি দিয়ে মানুষও হত্যা করতে পারি। টিকটক সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা শুনেছি, তা দিয়ে ভালো কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আরও একটি মরণনেশা আমাদের কোমলমতি ছেলেমেয়েদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। সেটি হলো পাবজি গেমস। মোবাইল ফোনে এ গেমসে ছেলেমেয়েরা আসক্ত হয়ে পড়েছে। পাবজিসহ কিছু কিছু গেমস ছেলেমেয়েদের দাঙ্গাবাজ হতে উদ্বুদ্ধ করছে। পরিচিত বন্ধু ছাড়াও অপরিচিত অনেকে যুক্ত থাকে এসব গেমে। তাই ছেলেমেয়েরা সবার অজান্তে খারাপ নেটওয়ার্কে জড়িয়ে পড়ছে। গোলটেবিল বৈঠক থেকে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি করছি যে, দ্রুত এসব গেম বন্ধের ব্যবস্থা নিন। শুধু টিককট ভিডিও নয়, যেসব সাইট বা ভিডিও আমাদের উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে সেগুলো বন্ধ করতেই হবে। এমনিতেই করোনা মহামারির কারণে আমাদের অর্থনীতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেকের আয় কমে গেলেও ব্যয় বেড়েছে। মানুষ চাকরি বা কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সমাজে এই ধরনের বিষফোঁড়ার সঙ্গে কোনোভাবেই আপস করা যাবে না। তাই সমাজের দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এ ধরনের বৈঠক আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতেও অনেকে এ ধরনের আয়োজন করবে। কিন্তু এতেই সমস্যার সমাধান হবে না। গণমাধ্যম ভুল ধরিয়ে দিতে পারে। তথ্য-উপাত্ত সাজিয়ে প্রচার করতে পারে। আর ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। বৈঠক থেকে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেসব বিষয়ে সবাইকে একমত হওয়া উচিত। প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে কাজ করলে এসব সমস্যা থাকবে না। আর এসব সমস্যা দূর হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে আর কোনো বাধা থাকবে না।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা ২ কোটি, যার মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত এবং বাকি এক কোটি অনিয়মিত মাদকসেবী। সুতরাং নির্দিষ্টভাবে কত সংখ্যক মাদকাসক্ত আছে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে, পরিস্থিতি যে ভয়াবহ তা বিভিন্ন সংবাদপত্রের তথ্যচিত্র থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। দেশে মাদকাসক্তের ৮৪ ভাগ পুরুষ ও ১৬ ভাগ নারী। এর মধ্যে ৮০ ভাগ তরুণ, ৮০ ভাগ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, ৯৮ ভাগ ধূমপায়ী, ৫৭ ভাগ যৌন অপরাধী এবং ৭ ভাগ নেশা গ্রহণকারী এইচআইভি আক্রান্ত। জরিপে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা মাদকাসক্তদের মধ্যে ইয়াবায় আসক্ত সর্বাধিক। এ ইয়াবা আসক্তদের ৮০ ভাগই শিক্ষার্থী। ইয়াবা এমনই একটি ধ্বংসাত্মক মাদক, যেটা গ্রহণ করলে সাময়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলেও চরম শারীরিক ও মানসিক অবসাদ হয় এবং সেটা থেকে চরম হতাশা, নৈরাজ্য ও বিষাদে পতিত হয়, পরিণতিতে সমাজের জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে আত্মহত্যাও করতে পারে একজন ইয়াবা গ্রহণকারী।
মূল প্রবন্ধে তিনি আরও বলেন- ধর্ষণ, ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা, খুনসহ সব অপরাধের ৮০ শতাংশই মাদকাসক্তদের দ্বারা সংঘটিত হয়। তারা এসব অপরাধের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত এবং নিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে সন্ত্রাস, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অন্যতম কারণ মাদকাসক্তি। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পরও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাদক। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়, মাদক সেবন করার পর অনেকের মধ্যে এক ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার ক্ষেত্রে মাদক বেশি প্রভাব ফেলে। অনেকেই মাদক সেবনের পর পরিবেশ পরিস্থিতির সুযোগে ধর্ষণ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। প্রতিদিন ঢাকায় গড়ে মাদকের সঙ্গে জড়িত ৫০ জন গ্রেফতার হয়। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশের চিত্র প্রায় একই। মাদক আইনে মামলা অন্যান্য অপরাধের তুলনায় অনেক বেশি। গড়ে প্রায় ৩০০ মাদক মামলা হয় প্রতিদিন।

তিনি আরও বলেন, গত ১০-১১ বছরে রাজধানীতে ঘটে যাওয়া আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই কিশোর অপরাধীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা গডফাদারদের নেতৃত্বে বড় ধরনের চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানি এবং মাদক বিক্রির মতো কাজে যুক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন দলের বা সহযোগী সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কিশোরদের একটি অংশ এলাকার ‘প্রভাবশালী’ বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় সারা শহরে প্রভাব বিস্তার করছে। তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারা এলাকা, করছে নানা অপরাধ। গ্রুপে গ্রুপে মারামারিতে খুনোখুনিতে হচ্ছে প্রতিদিন বাড়ছে হানাহানি সংঘাত। এ সব কিশোররা দল বেঁধে মাদক সেবন করছে যেখানে সেখানে।
যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, যে বিষয়ে আজকের আয়োজন- মাদক, কিশোর গ্যাং এবং টিকটক, এর বাইরেও অনেক ব্যাধি আছে। সমাজ এখন ব্যাধিতে জর্জরিত বলা যায়। সেই ব্যাধি নিরসনের কাজও কিন্তু চলছে। আমরা সংশোধনের চেষ্টা করছি। নতুন একটা জায়গায় যাওয়ার প্রয়াস আমাদের আছে। কিন্তু তারপরেও এ মুহূর্তে এই তিনটি বিষয় দারুণভাবে আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে নাড়া দিয়েছে- এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সে কারণেই যুগান্তর মনে করেছে এ সময়ে এই বিষয়টি অনেক বেশি আলোচনায় আসা দরকার। এ বিষয়টি থেকে আমরা কীভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি সেই দিকনির্দেশনা জাতির সামনে উপস্থাপন করা খুবই জরুরি। যুগান্তর সংবাদপত্র হিসাবে সংবাদ সংগ্রহ, প্রকাশ এবং পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তার একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে- সেটি বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাসের কারণেই আমরা নানা রকম জনসেবা ও সমাজ সচেতনতামূলক আলোচনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকি। কোভিড-১৯ এর কারণে গত এক বছর সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে তিনটি বিষয় সামনে এসেছে, তা সমাজকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে বলে আমরা আজকের এ আয়োজনে কোভিডের মধ্যেও সমবেত হয়েছি।
যুগান্তর সম্পাদক বলেন, আসলে এসব ব্যাধি দূর করার জন্য একটি সমন্বিত কর্মপ্রয়াস দরকার। এ জায়গায় সমাজ পরিবর্তনের জন্য। সমাজ নিয়ে অনেক সময় আমাদের বিব্রত হতে হয়। নতুন প্রত্যাশার জায়গা যেমন তৈরি হয়েছে তেমনিভাবে নানা রকম সমস্যা ও সংকটও তৈরি হয়েছে। কিন্তু থামলে তো চলবে না। জীবনতো আর থেমে থাকে না, সময়ও থেমে থাকে না। কাজেই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সমাজ উত্তরণের এ সময়কালে আমাদের অনেক বেশি সতর্ক ও সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। সেটি যেমন পরিবার থেকে দরকার, সমাজের দরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরকার, রাষ্ট্রের দরকার। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে রাষ্ট্র আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি সেখানে মানবকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসাবে দেশটাকে যদি আমরা গড়ে তুলতে চাই, সেক্ষেত্রে সবার যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করা খুব জরুরি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন- মাদক, কিশোর গ্যাং ও টিকটক- এ তিন ব্যাধি থেকে উত্তরণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার ও বাবা-মা। সন্তান কোথায় যায়, কি করে, কি দেখে এসব জানতে হবে। সমাজে এখন মানবিক মূল্যবোধের অভাব রয়েছে, পারিবারিক মূল্যবোধের অভাব রয়েছে। তাই বাচ্চাদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। বাচ্চার হাতে মোবাইল দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না। মোবাইল ফোন-ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধ করতে হবে। যেই অ্যাপগুলোর কারণে আমাদের বাচ্চারা ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিটিআরসির ভূমিকা রয়েছে।