ক্যারিবীয়ানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে স্বাগতিকদের শেষ জুটি বাদ দিলে বোলিংয়ের পুরোটা সময় আধিপত্য করেছে টাইগাররা।
রোববার গায়ানায় টস হেরে প্রথমে ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহটা বেশি দূর আগাতে পারেনি। নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে নিকোলাস পুরানরা করেছে মাত্র ১৪৯ রান। সমর্থকদের ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ করে দিতে জয়ের জন্য টাইগারদের প্রয়োজন মাত্র ১৫০ রান।
শেষ কবে বোলিংয়ে এমন সুদিন দেখেছিলো টাইগার সমর্থকরা সেটা বলা মুশকিল। অভিষিক্ত নাসুম আহমেদ থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের স্পিন ঘূর্ণিতে নাকাল ক্যারিবীয়রা। আর তিন পেসারের মধ্যে তাসকিন আহমেদ উইকেট না পেলেও মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম স্বাগতিকদের বুকে কম্পন সৃষ্টি করেন। দু’জন সাজঘরে ফিরিয়েছেন বাঘা বাঘা ব্যাটারদের।
পেসার শরিফুল ইসলাম ৮ ওভার বল করে এক মেডেনে ৩৪ রান খরচায় ৪ উইকেট শিকার করেছেন। ৯ ওভারের মধ্যে দুই মেডেন দিয়ে ৩৬ রান খরচায় মিরাজের শিকার ৩ উইকেট। এছাড়া মুস্তাফিজ শরিফুলের সমান ইকোনমি রেটে শিকার করেছেন একটি করে উইকেট।
অন্যদিকে উইকেট না পেলেও দুর্দান্ত ছিলেন নাসুম। ৮ ওভার বল করে তিন ওভার মেডেন দিয়ে খরচ করেছেন মাত্র ১৬ রান। রিভিউয়ের মারপ্যাঁচে না পড়লে উইকেটও পাওয়া হয়ে যেত তার।
ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। তার বলে বোল্ড হয়ে শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন শাই হোপ। ৩২ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন মেহেদী মিরাজ। তিনি ফিরিয়েছেন ১০ রান করা মায়ার্সকে।
চাপে থাকা ব্রেন্ডন কিং চেষ্টা করেছিলেন হাত খুলে খেলতে। আর তাতে সুযোগ পেয়ে যান শরিফুল। ইনিংসের ২১তম ওভারে তার করা চতুর্থ বলটি সোজা ব্যাটে তুলে মারতে গিয়েছিলেন কিং। তবে ধীরগতির উইকেটে টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক। মিড অফে ভুল করেননি বদলি ফিল্ডার এনামুল হক।
তাতে ভাঙে কিং ও ব্রুকসের জুটি, ৫৬ বলে তারা করে মাত্র ২৩ রান। ৫৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার পরের বলেই সাজঘরের পথ ধরেন রিভিউ বিতর্কে মাত্র ৯ রানে বেঁচে ফেরা ব্রুকস। ব্যাট চালিয়েছেন, তবে কানায় লেগে গেছে উইকেটকিপার নুরুলের হাতে। এবার রিভিউ করেননি তিনি আর। হ্যাটট্রিক বলেও এলবিডব্লিউয়ের আবেদন হয়েছিল, তবে তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার।
৪১ ওভারের ম্যাচে মাত্র ৫৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগিতকরা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ম্যাচের হাল ধরার চেষ্টা করেন পুরান-পাওয়েল জুটি। কিন্তু মিরাজের এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পা দিয়ে ১১ বলে ব্যাক্তিগত ৯ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে পাড়ি দিতে হয় পাওয়েলকে। তাদের দুজনের ভাঙে ১৯ রানে।
২৭তম ওভারে নাসুমের এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়েছিলেন পুরান। কিন্তু এবারও অভিষেক উইকেট পাওয়া হলো না এ স্পিনারের। রিভিউ নিয়ে বেঁচে ফিরলেন তিনি। তবে বাঁচতে পারেননি মিরাজের হাত থেকে। পরের ওভারে এসে মিরাজ তার ঘূর্ণি জাদুতে বোল্ড করে ফেরান পুরানকে। ২৪ বল মোকাবিলায় ৩ চারের সাহায্যে ১৮ রান করেন তিনি।
বোলিং না করে দুই ওভার পরে আবার ক্যারিবীয়দের ইনিংসে মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়ে বসেন মিরাজ। মুস্তাফিজের করা ইনিংসের ৩১তম ওভারের চতুর্থ বলটি পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে এক রান নেয়ার চেষ্টা করেন শেফার্ড। তিনি নিরাপদে অপরপ্রান্তে পৌঁছালেও আকিলকে রান সম্পূর্ণ করতে দেননি মিরাজ। সরাসরি থ্রোতে ভাঙেন স্টাম্প। ৯৬ রানে ৭ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। দলীয় ১০৮ রানে অষ্টম উইকেট যেতে পারত স্বাগতিকদের।
কিন্তু শেফার্ডের ক্যাচ মিস করেন শরিফুল। সে আক্ষেপ অবশ্য পরের ওভারে বল করতে এসে ঘুচান এ পেসার। ইনিংসের ৩৪তম ওভারে তারা করা প্রথম বলটি ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে আফিফের হাতে ধরা পড়েন শেফার্ড। ২ চারের সাহায্যে ১৯ বলে ১৬ রান করেন এ ব্যাটার।
একই ওভারের চতুর্থ বলে গুদাকেশ মতি সাজঘরে ফেরেন মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১১ বল মোকাবিলায় ৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। শেষ জুটিটা অবশ্য বেশ ভোগায় টাইগারদের। অবশ্য একের পর এক ক্যাচ মিসের মহড়ায় শেষদিকে বেশ কিছু রান তুলে নেয়ার সুযোগ পায় স্বাগতিকরা।