বৃষ্টি ও ঢলে ফুলেছে তিস্তা লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে রংপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বুধবার সকালে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপত্সীমার ৭০ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নীলফামারীতে কয়েকটি বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। লালমনিরহাটে একটি সড়কের প্রায় ৪০০ মিটার ধসে যায়। ব্যাপক ক্ষতি হয় ফসলের। খবর আমাদের অফিস, স্টাফ রিপোর্টার, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের।

রংপুর: জেলায় উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া তিস্তা নদীতে সর্বোচ্চ পানি রেকর্ড করা হয়েছে। পাউবো জানায়, কয়েকটি রাজ্যে ভারী বর্ষণের কারণে গজলডোবার সব গেট খুলে দেয় ভারত। এতে মঙ্গলবার রাতে তিস্তার পানি হু হু করে বাড়তে থাকে। বুধবার সকালে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপত্সীমার ৭০ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা, মর্ণেয়া ইউনিয়নসহ কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার চর, দ্বীপচর ও তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানির তীব্র স্রোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

বুধবার রাতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে উদ্ধার তৎপরতা চালায় সেনাবাহিনী। স্পিড বোটের মাধ্যমে চরগুলো থেকে পানিবন্দিদের নিরাপদ স্থানে উদ্ধার করে আনা হয়। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ হিসেবে খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বুধবার বিকালে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে পানিবন্দি হয়ে পড়ে পশ্চিম ইচলীর মানুষজন। এ সময় নদীতে ঘরবাড়ি বিলীন হতে থাকলে কৃষক নয়া মিয়া (৫৫) গরু বাঁচাতে গোয়াল ঘরে ছুটে যান। গরুর রশি খুলতেই গোটা ঘর পানিতে ভেসে যায়। পরে নয়া মিয়াকে উদ্ধারে স্থানীয়রা চেষ্টা চালালে এখন পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায়নি।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, বুধবার তিস্তা নদীতে সর্বোচ্চ পরিমাণ পানি রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র স্রোতে গঙ্গাচড়ার ডান তীরের গান্নার পাড় ঝুঁকিতে ছিল। বর্তমানে পানি অনেক কমে গেছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত পানি বিপত্সীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাতের মধ্যেই কাউনিয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

ডিমলা (নীলফামারী): তিস্তার পানির তোড়ে কয়েকটি বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানির স্রোতে ভেসে গেছে গবাদি পশুসহ গাছপালা। বুধবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম): নাগেশ্বরীতে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে হঠাত্ করেই বেড়েছে নদ-নদীর পানি। দেখা দিয়েছে দুধকুমার নদে ব্যাপক ভাঙন। গত দুই দিনে ভেঙ্গে যায় অর্ধশত ঘরবাড়ি।

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট): বুধবার রাতে কাকিনা-মহপুির সড়কের প্রায় ৪০০ মিটার সড়ক ধসে গেছে। ফলে বিভাগীয় সড়ক রংপুরের সঙ্গে চার উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মো. সামসুজ্জামান বলেন, আজকেই (বৃহস্পতিবার) সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম): তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিনটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩ হাজার পরিবার।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১৫০ সেন্টিমিটার পানি বাড়ে। ফলে তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে বিপত্সীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বরিশাল: ‘ভাঙে নদী বসতবাড়ি শুনতে কি পাও আর্তনাদ, বেঁচে থাকার জন্য মোরা চাই টেকসই বেড়িবাঁধ’ এই স্লোগান নিয়ে নদীভাঙন রোধে বরিশালে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সুগন্ধা নদীর তীরে মানববন্ধন করেন বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের রাকুদিয়া গ্রামবাসী।