ভারতের উত্তরবঙ্গের আদিবাসী নেতা জন বার্লা গত বুধবার রাতে দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শামিল হয়েছেন। তাঁর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্যের আন্দোলনের জন্য সুখবর বলে বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন কামতাপুর লিবারেশন পার্টির (কেপিপি) প্রধান নিখিল রায়।
উত্তরবঙ্গের সব কটি জেলা নিয়ে (বর্তমানে ৯টি) কামতাপুর রাজ্য গঠনের আন্দোলন চলছে ১৯৬৯ সাল থেকে। সেই আন্দোলনের প্রধান দল কেপিপি। তারা ছয়টি দলের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী জোট গড়ে শান্তিপূর্ণভাবে পৃথক রাজ্যের আন্দোলন চালাচ্ছে।
গত রোববার (৪ জুলাই) এই সাতটি দলের শীর্ষ নেতারা আলিপুরদুয়ার জেলার এমপি জন বার্লার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবিতে বার্লা কয়েক মাস ধরেই বিবৃতি দিচ্ছিলেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে এই দাবি আবার তুলেছেন সশস্ত্র ও নিষিদ্ধ কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান জীবন সিংহ। এ পরিস্থিতিতে বার্লার সঙ্গে সাত দলের বৈঠক ও দিন চারেকের মধ্যেই তাঁর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার বিষয়টি পৃথক রাজ্যের জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে। নিখিল রায়ও মনে করেন, এর ফলে পৃথক রাজ্যের আন্দোলন আরও জোরদার হবে।
নিখিল রায় বলেন, ‘কোনো জনজাতির থেকে যদি একজন মন্ত্রী হয়, তবে জনজাতির জন্য সেটা ভালোই হয়। কামতাপুর আন্দোলনের প্রশ্নে, সেটি ভালোই হবে বলে আমার ধারণা। একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চাইলে নানাভাবে সহযোগিতা করতে পারেন। এখানকার এই যে এত জনজাতি, তাদের জন্য নির্দিষ্টভাবে কিছু করতে চান কি না, তা মন্ত্রীর মানসিকতার ওপর নির্ভর করবে।’
কামতাপুর রাজ্যের দাবি অনেক পুরোনো হলেও সেই দাবি গত কয়েক বছরে স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে এই দাবি আবার কিছুটা মাথাচাড়া দিয়েছে, তা স্বীকার করেন নিখিল রায়। তিনি বলেন, ‘এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে তারা (বিজেপি) ঠিক কী চায়। তারা কখনো বলে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করব, কখনো বলে পৃথক রাজ্য করব। আমাদের বক্তব্য অবশ্য পরিষ্কার। মালদা থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত (৯টি জেলা) সব জেলা নিয়ে আমরা কামতাপুর রাজ্যের পক্ষে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর (বার্লা) সঙ্গে গত রোববার খুব সামান্যই কথা হয়েছে। তারা কী চাইছে, সেটা বোঝা দরকার।’
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অংশ মনে করছে, জন বার্লার পৃথক রাজ্যের দাবির পেছনে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সমর্থন রয়েছে। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে লড়েছিলেন দলের অন্যতম মুখপাত্র ওমপ্রকাশ মিশ্র। তিনি বলেন, ‘বার্লাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নেওয়া থেকেই এটা পরিষ্কার যে তাঁকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটা পরোক্ষ মদদ দিচ্ছে।’
তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথক রাজ্যের দাবিকে খারিজ করে দিয়েছেন। কিন্তু সেই দাবি সম্প্রতি যিনি তুলেছিলেন, সেই জন বার্লাকেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হলো। এর ফলে এই জল্পনা আরও জোরালো হলো যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো শীর্ষ নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করতে বার্লার প্রস্তাবটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র মনে করেন, এতে বিজেপির শেষ পর্যন্ত লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি। তিনি বলেন, ‘বাঙালিরা একজোট হয়ে প্রতিবাদ করবেন। উত্তরবঙ্গের মানুষও এটা মেনে নেবেন না। কোচবিহারের এমপি নিশীথ প্রামাণিকও গতকাল মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন এবং সামান্য ভোটে জিতেছিলেন। ফলে তাঁকে বিধানসভা আসনটি ছাড়তে হয়েছে এবং সেখানে উপনির্বাচন হবে। উত্তরবঙ্গে আসন্ন এই উপনির্বাচনেই প্রমাণিত হবে যে সেখানকার মানুষ পৃথক রাজ্যের দাবিকে বা ওই অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টাকে সমর্থন করেন না। কারণ, ওই উপনির্বাচনে বিরাট ভোটে হারবে বিজেপি।’
ওমপ্রকাশ মিশ্র আরও বলেন, ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলে বিজেপি সেটা দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং এই অংশটিকে নিয়ে গড়তে চায় নাকি কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারকেও তার সঙ্গে জুড়তে চায়, সেটাও তাদের পরিষ্কার করতে হবে।’