সিআর সেভেন মাঠে নামেনই যেন ফুটবলের রেকর্ড বইটা ওলটপালট করতে। গত রাতে মাঠে নেমেই গড়ে ফেললেন দুটি রেকর্ড। ম্যাচের শেষ দিকে জোড়া গোল করে গড়লেন নতুন আরেক ইতিহাস। ইউরোপের খেলোয়াড়দের মধ্যে মেজর টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার কীর্তি গড়ার দিনে মিশেল প্লাতিনিকে টপকে ইউরোর সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
হাঙ্গেরির পুসকাস অ্যারেনায় প্রতিযোগিতার ‘এফ’ গ্রুপে মঙ্গলবার স্বাগতিকদের বিপক্ষে ম্যাচে রেকর্ডগুলো গড়েন ৩৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার। অথচ ম্যাচের ৮০ মিনিট পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, হাঙ্গেরি পর্তুগালকে আটকে রাখবে তো বটেই, বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে পুরো তিন পয়েন্টও পকেটে পুরে ফেলতে পারে। কিন্তু যে দলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো একজন আছেন, সে দল শেষের আগে হাল ছাড়ে কী করে? পর্তুগাল ছাড়েনি। শেষমেশ তাই বড় এক জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন রোনালদোরা।
বিশ্বকাপ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ মিলে মেজর টুর্নামেন্টে রোনালদোর এটি ৩৯তম ম্যাচ। ছাড়িয়ে গেলেন জার্মানির সাবেক ফরোয়ার্ড বাস্তিয়ান শোয়াইনস্টাইগারকে। একই সঙ্গে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পাঁচ আসরে খেলার কীর্তিও গড়লেন রোনালদো।
এরপর হয় গোলের রেকর্ডটি। হাঙ্গেরির জমাট রক্ষণে একের পর এক আক্রমণ ভেস্তে যাওয়ায় পয়েন্ট হারানোর শঙ্কায় পড়েছিল পর্তুগাল। শেষ দিকে পাল্টে যায় চিত্র। ৮৪তম মিনিটে সোভাগ্যের ছোঁয়ায় এগিয়ে যায় তারা। এর তিন মিনিট পরেই সফল স্পট কিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোনালদো। ১০ গোল নিয়ে পা রাখেন গোলদাতাদের তালিকার চূড়ায়। ছাড়িয়ে যান ফ্রান্স কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনিকে। যোগ করা সময়ে আরেকটি গোল করেন রোনালদো।
পাঁচ আসর মিলিয়ে ২২ ম্যাচে রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন রোনালদো। ২০০৪ সালে নিজের প্রথম আসরে ২টি, ২০০৮-এ ১টি, ২০১২ ও ২০১৬ আসরে করেন ৩টি করে। ফ্রান্স কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনি ৯ গোল করেছিলেন এক আসরেই, ১৯৮৪ সালে ৫ ম্যাচে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ইউরোর পাঁচ ভিন্ন আসরে গোল করা একমাত্র ফুটবলারও তিনি। একাধিক আসরে অন্তত ৩ গোল করার একমাত্র কীর্তিও রোনালদোর। তার গোল করার ধরনেও আছে রেকর্ড। আগের ৯টির মতো এবারও ডি-বক্সের মধ্য থেকে জালে বল পাঠিয়েছেন, এর মধ্যে ৫টি হেডে। দুটিই রেকর্ড।
গ্রুপ পর্যায়ে করেছেন তিনি সর্বাধিক ৮টি গোল। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে দুটি ফাইনাল খেলা ৪৪ খেলোয়াড়ের একজন রোনালদো। তিনটি ফাইনাল খেলতে পারেননি কেউ। এবার সুযোগ তার সামনে।
বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ড ভেঙেছেন ও গড়েছেন। এর মধ্যে আরেকটি দুর্দান্ত রেকর্ড গড়ার পথে এগিয়ে চলেছেন রোনালদো; জাতীয় দলের হয়ে ১৭৫ ম্যাচে তার গোল হলো ১০৬টি। আর তিনটি হলে ইরানের আলি দাইয়ের গড়া ১০৯ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করবেন পাঁচবারের বর্ষসেরা এই খেলোয়াড়।
চলতি ইউরোতে আরো বেশ কিছু রেকর্ড হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্তুগিজ যুবরাজকে। দারুণ ফর্মে থাকা সিআর সেভেন সেই রেকর্ডগুলো গড়েও ফেলতে পারেন।
১. আন্তর্জাতিক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল
গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় দলের জার্সিতে ‘গোলের সেঞ্চুরি’ পূরণ করেন রোনালদো। পর্তুগালের হয়ে বর্তমানে তার গোলসংখ্যা ১০৫টি। আর মাত্র ৪টি হলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইরানের আলী দাইয়ের গড়া ১০৯ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করবেন তিনি। যে আগুনে ফর্মে আছেন তাতে চলতি ইউরোতেই রোনালদো রেকর্ডটি যে নিজের করে নেবেন সেটা নিয়ে বাজি ধরাই যায়।
রেকর্ডটি নিয়ে মাঝেমধ্যে একটু-আধটু কথা বলেছেন রোনালদো। ২০১৯ সালে যেমন বলেছিলেন রেকর্ডটি নিজের করে নেওয়ার আগ্রহের কথা, “সব রেকর্ডই তৈরি হয় ভাঙার জন্য এবং এই রেকর্ড আমি ভাঙব।”
২. অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার ইউরো জয়
এই রেকর্ড গড়তে হলে একা রোনালদো নয়, পর্তুগাল দলেরও বাকিদেরকেও অবদান রাখতে হবে। স্পেনের গোলরক্ষক ইকর ক্যাসিয়াস এমন একজন অধিনায়ক যিনি ২ বার ইউরো কাপ জিতেছেন। সেটা ২০০৮ এবং ২০১২ সালে। পর্তুগাল ২০১৬ সালে ইউরো কাপ জিতেছে রোনালদোর নেতৃত্বে। এবারেও জিততে পারলে ক্যাসিয়াসের সঙ্গে এক সিংহাসনে বসবেন রোনালদো।
৩. ইউরো কাপে হ্যাটট্রিক
শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে ইউরো কাপে পর্তুগিজ তারকার এখন পর্যন্ত কোনো হ্যাটট্রিক নেই। এবারের প্রতিযোগিতায় সেই হ্যাটট্রিক কি করতে পারবেন রোনালদো? দেশের হয়ে ৯বার হ্যাটট্রিক করলেও ইউরোতে একবারও সেই কীর্তি নেই।
৪. সবচেয়ে বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে ইউরো ফাইনালে গোল
১১ জুলাই ফাইনাল। ওই দিন রোনালদোর বয়স হবে ৩৬ বছর ১৫৬ দিন। ফাইনালের সেই ম্যাচে গোল করলে সবচেয়ে বেশি বয়সে ইউরো ফাইনালে গোল করার রেকর্ড গড়বেন তিনি। কঠিন শোনালেও রোনালদো সেটা সহজ করার ক্ষমতা রাখেন। এজন্য আগে ফাইনালে তো উঠতে হবে।