দুই বাংলার নায়িকা বদল!

দুই বাংলার চলচ্চিত্রে শিল্পী বদলের রীতি দীর্ঘদিনের। এক সময় এপার বাংলার নায়করাজ রাজ্জাক, রোজিনা, ফেরদৌস থেকে শুরু করে অনেকেই অনেকেই কলকাতার ছবিতে নিয়মিত কাজ করেছেন। তেমনি বাংলাদেশের ছবিতেও ওপার বাংলার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শতাব্দী রায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকেই অভিনয় করেছেন।

শিল্পী বদলের সেই চর্চা এখনো চলছে দুই ইন্ডাস্ট্রিতে। এই তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি অভিনেত্রী ওপার বাংলায় বেশ প্রশংসিত ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। পরিচালক-প্রযোজকরাও তাদের ওপর ভরসা রাখছেন নির্দ্বিধায়। এর মাঝে রয়েছেন জয়া আহসান, মিথিলা ও বাঁধনের মতো মেধাবী অভিনয় তারকারা।

কলকাতার গুণী পরিচালক ও অভিনেতা অরিন্দম শীলের হাত ধরে ২০১৩ সালে কলকাতার ‘আবর্ত’ সিনেমায় অভিষিক্ত হন বাংলাদেশের জয়া আহসান। প্রথম ছবি দিয়েই বাজিমাত করেন তিনি। এরপর একে একে জয়া অভিনয় দিয়ে ওপার বাংলার দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। জয়ার এমন সাফল্য ও চাহিদার প্রভাব নাকি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, স্বস্তিকা মুখার্জি, পাওলি দাম, রাইমা সেনের মতো গুণী অভিনেত্রীদের ক্যারিয়ার ম্লান করেছে! সম্প্রতি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে

পত্রিকাটির দাবি, জয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের মিথিলা ও বাঁধনেরও চাহিদা বেড়েছে ওপার বাংলার সিনেমা-সিরিজে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে না বললেও টলিউডের অনেক অভিনেত্রীর চাপা ক্ষোভ রয়েছে। আনন্দবাজার বলছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নায়িকা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, ‘এমন অনেক চরিত্রই বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের দেওয়া হয়, যেটা এখানকার যে কেউ করতে পারত।’

এ প্রসঙ্গে জয়া বলেন, ‘কাজের সুযোগ সকলেরই আছে। সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা তো ভালোই। আমার মতে শিল্পের কোনো সীমারেখা থাকা উচিত নয়।’

জয়ার মন্তব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিথিলাও হাঁটলেন একই পথে। তিনি বলেন, ‘কেউ কারো কাজ, জায়গা কেড়ে নিতে পারে বলে মনে হয় না। সকলেই নিজের যোগ্যতা দিয়ে কাজ পাচ্ছেন। এটা দুই দেশের শিল্প আদান প্রদানের একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত। এখানে মন্দভাবে প্রতিযোগিতা নিয়ে ভাবার কিছু নেই।’

বাঁধন তার মন্তব্যে বলেন, ‘অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অভিনেত্রীরা এসে কাজ করায় টলিউডের কিছু অভিনেত্রীর মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এগুলো এড়িয়ে সদর্থক দিকগুলো ভাবলে, সকলেরই ভালো হবে।’ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের প্রতি কলকাতার এই আগ্রহের মূলে রয়েছেন দর্শকরা। মূলত কলকাতার পরিচালকদের কাজগুলোর প্রতি খুবই আগ্রহী ঢাকার দর্শকরা। এসব দর্শক ধরতেই সেখানকার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও নির্মাতারা বাংলাদেশের অভিনেত্রীদের প্রাধান্য দিচ্ছেন।

দিনশেষে প্রতিভাই যে শেষ কথা বলে সেটা একাধিকবার প্রমাণ করেছেন দুই বাংলার শিল্পীরা। নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েই কলকাতায় পা রেখেছিলেন নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহিসহ অনেকেই। সেই ধারাহিতকতায় দেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের বিপরীতে ক’দিন আগেই ‘অন্তরাত্মা’ ছবিতে অভিনয় করে গেলেন ওপার বাংলার অভিনেত্রী দর্শনা।

পাশাপাশি ‘প্রিয়া রে’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করতে এ মাসেই ঢাকা আসছেন ওপার বাংলার অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়। যিনি এর আগেও ঢাকার ছবিতে কাজ করেছেন। এছাড়া অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দুই বাংলায় নিয়মিত অভিনয় করছেন। সেখানে ওপার বাংলার তারকাদের এমন ক্ষোভ রীতিমতো হতবাক করেছে চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের। এ ধরনের মন্তব্য দুই বাংলার ইন্ডাস্ট্রির জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!