লকডাউনে দরিদ্র কর্মজীবী মানুষের জীবিকা নির্বাহের সব পথ ‘শাটডাউন’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, লকডাউনে দরিদ্র মানুষকে ঘরে রাখতে হলে তাদের এককালীন নগদ ১৫ হাজার টাকা পৌঁছে দিতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। করোনা মহামারি পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার প্রয়োজনে তিনি দলের পক্ষ থেকে পাঁচটি সমন্বিত পদক্ষেপ তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।
দাবিগুলো হচ্ছে, প্রথমত দরিদ্র মানুষকে ঘরে রাখার জন্য তাদের ঘরে নগদ কমপক্ষে এককালীন ১৫ হাজার টাকা করে এবং খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত মানুষকে বাইরে বের হওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তৃতীয়ত অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে অতি দ্রুত টিকা প্রদান সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য একটি সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন করে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। অবিলম্বে দেশে টিকা উৎপাদনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চতুর্থত, বর্তমানে সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সর্বাত্মক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ, করোনা বেড বৃদ্ধিসহ অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাসামগ্রী ও পর্যাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে। সর্বশেষ হলো বিলম্ব হলেও এখনই দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সব রাজনৈতিক দল, এনজিও ও সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে একটি জাতীয় আপৎকালীন পরামর্শক কমিটি গঠন করতে হবে। এই পাঁচটি জিনিস করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রধান টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকারের অপরিকল্পিত ও অমানবিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত এ দেশের কোটি কোটি ‘দিন আনে দিনে খায়’ মানুষের জীবনই স্থবির করে দিয়েছে। বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ কাজ করেন, যাঁরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। এর বাইরে আছেন দোকান কর্মচারী কিংবা পরিবহন খাতের লোকজন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলাফল বলছে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের দেশব্যাপী খানা জরিপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পভার্টি রেট) বেড়ে ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ এদের দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহকে অব্যাহত রাখতে যে নগদ অর্থ বা খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা উচিত ছিল, বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন সরকার তার প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ অর্থ ন্যূনতম খাদ্যসহায়তা নিশ্চিত না করেই কঠোর লকডাউন আরোপের সিদ্ধান্ত কোনোক্রমেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয় এবং এটা ফলপ্রসূও হবে না। কারণ, লকডাউন কার্যকর করতে গেলে তার পূর্বশর্তগুলো পূরণ করতে হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মেগা প্রজেক্টের মেগা দুর্নীতির সব কাহিনি তো আপনাদের জানা আছে। এসব মেগা প্রজেক্টে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে চরম অস্বচ্ছতা, অদক্ষতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় ও মহাদুর্নীতির মহারেকর্ড তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ইতিপূর্বে অনেকবার বলা হয়েছে। ওই সব প্রকল্পের অর্থ বর্তমানে মানুষের জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে বরাদ্দ দিতে পারে সরকার। তা তারা করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ প্রমুখ।