ত্রাণবহর আটকে দিয়েছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাংশের একটি চেকপয়েন্ট থেকে জাতিসংঘের ত্রাণবহর ফিরিয়ে দিয়েছে। এরপর ‘বেপরোয়া লোকজন’ তা লুট করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এ তথ্য জানিয়েছে।

ডব্লিউএফপি বলেছে, ১৪টি ট্রাকের খাদ্য ত্রাণবাহী বহরটি দক্ষিণপূর্ব গাজার ওয়াদি গাজা চেকপয়েন্টে তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে সেটি ফিরিয়ে দেয়।

ডব্লিউএফপি ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত রাখার পর মঙ্গলবার প্রথম সেখানে ত্রাণবহর পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। উত্তর গাজায় গাজা সিটির কাছে ত্রাণবহরে লুটপাট ও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর সেখানে ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত রেখেছিল জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থাটি।

ডব্লিউএফপি এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ওয়াদি গাজা থেকে ত্রাণবহরটিকে উল্টো দিকে পাঠিয়ে দেওয়ার পর ফেরার পথে বেপরোয়া লোকজনের একটি বড় দল বহর থেকে খাবার লুট করে নিয়ে যায়। তারা প্রায় ২০০ টন খাদ্য লুট করে নিয়ে গেছে। গাজার উত্তরাংশে খাদ্য পাঠানোর সব উপায় অনুসন্ধান করে দেখছে তারা, কিন্তু দুর্ভিক্ষ এড়ানোর জন্য প্রচুর খাবার দরকার। আর তা শুধু সড়কপথেই নেওয়া সম্ভব। মঙ্গলবার ভোরে জর্ডানের বিমানবাহিনীর সঙ্গে মিলে তারা গাজার উত্তরাংশে ৬ টন খাদ্য ফেলেছে। এই খাবার ২০ হাজার মানুষের জন্য যথেষ্ট বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে পবিত্র রমজানের আগে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি না হলে ‘খুবই বিপজ্জনক’ পরিস্থিতি হবে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার বাইডেন এই সতর্কতার কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তি গ্রহণের বিষয়টি হামাসের ওপর নির্ভর করছে। গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোয় আলোচনা চলছে। এদিকে গাজায় দ্বিতীয়বারের মতো উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণসহায়তা ফেলেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। মিত্র ইসরায়েলকে বাইডেন বলেন, গাজায় আরও সহায়তা পৌঁছাতে না দেওয়া নিয়ে কোনো অজুহাত চলবে না।

অন্যদিকে জিম্মিদের মুক্তিসহ যুদ্ধবিরতির শর্তে হামাস রাজি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হতাশ। এ প্রেক্ষাপটে বাইডেনের কাছ থেকে এমন বক্তব্য এল।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির পরই কেবল ফিলিস্তিনি বন্দি ও ইসরায়েলি জিম্মি বিনিময় ঘটতে পারে। কায়রোতে হামাস, মিসর ও কাতারের কর্মকর্তাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। তার মধ্যেই একথা বলেছেন হামদান। আলোচনায় কোনো অগ্রগতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে হামদান যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য তাঁর দলের শর্ত ফের উল্লেখ করেন। এগুলো হলো– ইসরায়েলের সামরিক হামলার সমাপ্তি, গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং গাজার অন্য অংশে পালিয়ে যাওয়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া।

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজার ৭১৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজার ১৫৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নতুন করে হামলায় প্রায় ৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ১১৩ জন। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও রয়টার্সের।