আফগানিস্তানের বাদঘিস প্রদেশের রাজধানী কালা–ই–নাউ দখলে আফগান সেনা ও তালেবানের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। গতকাল বুধবার উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর আজ বৃহস্পতিবার শহরটির রাস্তায় রাস্তায় তালেবান যোদ্ধাদের মোটরযানে করে টহল দিতে দেখা গেছে। এএফপি ও রয়টার্সের খবর।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে দেশটিতে সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরালো করেছে তালেবান। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা যেসব জোরালো অভিযান পরিচালনা করেছে, বুধবারের অভিযান সেসবের একটি।
আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার আগেই তালেবান দেশটির এক–তৃতীয়াংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। বিদেশি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার হলে তালেবান আবার ক্ষমতা দখল করতে পারে—এমন সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে।
এদিকে তালেবানের কাছ থেকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ ফেরত পেতে সেখানে শত শত কমান্ডো পাঠিয়েছে আফগান সরকার।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ মোহাম্মাদি বলেন, তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে। কালা-ই-নাউয়ে তালেবানের হামলার কয়েক ঘণ্টার মাথায় তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি যে যুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীল সামরিক পরিস্থিতিতে আছি। ’
এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের জন্মভূমি ও জনগণকে রক্ষায় স্থানীয় প্রতিরোধ বাহিনীর সহায়তায় জাতীয় বাহিনী সব শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করবে। ’
আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার আগেই তালেবান দেশটির এক–তৃতীয়াংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। বিদেশি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার হলে তালেবান আবার ক্ষমতা দখল করতে পারে—এমন সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। ইতিমধ্যে পেন্টাগন বলেছে, দেশটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
আফগান সরকারের দাবি, সরকারি সেনারা তালেবানের অগ্রযাত্রা রুখতে সক্ষম। তবে বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। তালেবানের বিপক্ষে লড়তে আফগান বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। তালেবানের তাড়া খেয়ে দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তানে সহস্রাধিক সেনার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
লড়াই তীব্র হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কালা–ই–নাউয়ের অনেক বাসিন্দা শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ঘরবন্দী হয়ে আছেন। এরই মধ্যে তালেবানের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে আফগান বিমানবাহিনী।
আজিজ তাওয়াকোলি নামের এক বাসিন্দা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘শহরে এখনো তালেবান যোদ্ধারা রয়েছেন। মোটরযানে করে শহরে টহল দিচ্ছেন তাঁরা। ’ তিনি বলেন, এই শহরের ৭৫ হাজার বাসিন্দার অনেকে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো বা হেরাতে পালিয়ে গেছেন। শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় খুব কমই সাধারণ মানুষ বের হচ্ছেন। বুধবার রাতভর তালেবানের অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান ও উড়োজাহাজ থেকে বোমাবর্ষণ করেছে সরকারি বাহিনী।
বাদঘিস প্রাদেশিক কাউন্সিলের সদস্য জিয়া গুল হাবিবি বলেন, সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় তালেবানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো শহর ঘিরে রেখেছে তালেবান। শহরের সব এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে। লড়াইয়ের কারণে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দোকানপাট ছাড়াও বন্ধ আছে সরকারি সব প্রতিষ্ঠান। থেমে থেমে চলছে সংঘর্ষ।
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সংঘর্ষ পার্শ্ববর্তী হেরাত প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। এ প্রদেশের দুটি জেলা তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
তবে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফাওয়াদ আমান গতকাল দাবি করেন, কালা–ই–নাউ তাঁদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন শহরের উপকণ্ঠে তালেবানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন তাঁরা। অভিযানে ৬৯ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁদের বিপুলসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে সরকারি বাহিনী।
পশ্চিমা দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, আফগানিস্তানে এ মুহূর্তে শতাধিক জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান। যদিও তালেবান বলছে, ৩৪টি প্রদেশের ২০০ জেলা তাদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের দখলে থাকা এলাকার পরিমাণ আফগানিস্তানের মোট ভূখণ্ডের অর্ধেকের বেশি। তবে অধিকাংশ প্রধান প্রধান শহর ও প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে।
এদিকে হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে তাঁর দেশের সেনাদের সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে আজ দেশের জনগণের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন।