অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে এই মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর ফলে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঘিরে আগে থেকেই বাড়তি সতর্ক সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক এবং সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলমসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, চলতি বছর এ সময় পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষা মৌসুম এখনও শুরু হয়নি। সে জন্য আমরা মনে করি, ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের যা যা করণীয়, তা করা হচ্ছে জানিয়ে ডা. নাজমুল বলেন, দেশের মানুষকে বলতে চাই, নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্কতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে বিষয়টি আছে, তা যেন আমরা মেনে চলি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে বুধবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৯৭১ জন ও ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৫৬২ জন। এ সময়ে মারা গেছেন ১৩ জন। অথচ গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৫২ জন। কোনো মৃত্যু ছিল না।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. নাজমুল সমকালকে বলেন, বর্ষার আগেই এবার ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। তাই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘিরে একটু আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সাধারণত বর্ষাকালে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বিস্তার হয়। আর ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রকোপ হয়ে থাকে জুলাই মাসের পর থেকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন বর্ষার সময়কাল অনুমান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সঠিক সময় মশা নিয়ন্ত্রণের। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর একটি বিশেষ পরিস্থিতি ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গু রোগী কম ছিল কভিডের কারণে। গত বছর ডেঙ্গু রোগী আবার বেড়েছে। এ বছরের পাঁচ মাসে যত রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মারা গেছেন বিগত বছরগুলোতে এই সময় কখনও এত রোগী হননি।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখনই সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক নিধনে কাজ করছি। ভেক্টর কন্ট্রোলে এখন জোর দিতে হবে। পাশাপাশি মানুষকেও সচেতন হতে হবে। জমা পানি ফেলে দিতে হবে। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে ও সতর্ক থাকলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।
বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দেশের ৫০টি জেলা হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দেয়। এর বাইরে আরও হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীর তথ্য যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আগামী রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আবার প্রেস ব্রিফিং করবে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এবার এডিস মশার ঘনত্ব একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। এডিস মশা যেহেতু বেশি, ডেঙ্গুও বেশি হতে পারে। যে কারণে এখনই মশা নিধন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।