মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেলিভিশন তারকারা চলচ্চিত্র তারকাদের চাইতে বেশি উপার্জন করেন। এমনকি খ্যাতিতেও অনেকে চলচ্চিত্র তারকাদের ছাড়িয়ে গেছেন। অথচ ভারতীয় উপমহাদেশে ভিন্ন চিত্র। টেলিভিশনে অনেক ভালো কাজ করেও তারকা খ্যাতি জোটানো কঠিন হয়ে পড়ে।
খোদ বলিউডেই রয়েছে এমন অনেক তারকা, যারা টেলিভিশনে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও, তারকাখ্যাতি পেয়েছেন চলচ্চিত্রে। কয়েকজন বলিউড তারকাকে নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
শাহরুখ খান
শাহরুখ খানকে বলা হয় পুরোদস্তুর ‘সেলফ মেড স্টার’। বলিউড চেনেন, কিন্তু শাহরুখকে চেনেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া দুষ্কর। হাতে অল্প কিছু টাকা, অদম্য জেদ, আকাশছোঁয়ার প্রেরণা আর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে মায়া নগরী মুম্বাইয়ে পা রেখেছিলেন দিল্লির এই ছিপছিপে গড়নের যুবক। হার না মানা অসম সাহসী এই যোদ্ধার অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল আশির দশকের শেষ দিকে ‘ফৌজি’ নামে এক টিভি সিরিয়ালের মাধ্যমে। ১৯৮৮ সালে দূরদর্শনে চ্যানেলে প্রচারিত হতো ধারাবাহিকটি। সেনাবাহিনীর ক্যাডেট অভিমন্যু রায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। শাহরুখের ‘আই সে চ্যাম্প’ ডায়ালগ ছিল তখন মানুষের মুখে মুখে। এরপর ‘দিল দরিয়া’ নামে এক ধারাবাহিকেও কাজ করেছিলেন বলিউড বাদশাহ। ছোট পর্দায় কিং খানের যাত্রায় আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো সার্কাস (১৯৮৯)। শেখারন রায়ের চরিত্রে অভিনয়ের ফলে চারদিক থেকে এই শো তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল শাহরুখকে। ওই ধারাবাহিকেই ভিকি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর। যদিও তিনি নাকি শুরুর দিকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাননি। ব্যক্তিগত হতাশা থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য চলচ্চিত্রে টুকিটাকি কিছু কাজ করতে চেয়েছিলেন মাত্র। এরপর বাকিটা ইতিহাস।
বিদ্যা বালান
লাবণ্যময়ী বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালান বলিউডে অভিনয়ের আগে জনপ্রিয় কমেডি ফ্যামিলি ড্রামা সিরিয়াল ‘হাম পাঁচ’-এ অভিনয় করেছিলেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬। দুর্দান্ত ও সাবলীল অভিনয় দেখে কখনোই মনে হবে না, এই প্রথম তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। একতা কাপুর প্রযোজিত এই সিরিয়ালে বিদ্যা রাধিকা মাথুরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই সিরিয়াল দ্বারা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন বিদ্যা। দীর্ঘদিন টেলিভিশনে কাজ করার পর ২০০৩ সালে বাংলা চলচ্চিত্র ‘ভালো থেকো’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। বলিউডে তাঁর প্রথম ছবি ‘পরিণীতা’। ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করে আলোচনায় চলে আসেন বিদ্যা। এরপর ‘কাহানি’, ‘লাগে রাহো মুন্না ভাই’, ‘ডার্টি পিকচার’-এর মতো ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যান।
ইয়ামি গৌতম
ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন থেকেই ইয়ামি গৌতম সবার কাছে চেনা এক মুখ। ২০০৮ সালে ছোট পর্দায় অভিষেক ‘চাঁদ কে পার চলো’ ধারাবাহিক দিয়ে। এর দু’বছর পর আনলেন ‘ইয়ে প্যায়ার না হোগা কম’। ছোট পর্দাতে তিনি ওই সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তারপর ভিকি ডোনোর দিয়ে বলিউডে পদার্পণ। এরপর একে একে ‘বদলাপুর’, ‘কাবিল’, ‘সনম রে’ বা ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর মতো সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।
ম্রুনাল ঠাকুর
দক্ষিণের তারকা দুলকার সালমানের সঙ্গে ‘সীতা রামাম’ যেন ম্রুনাল ঠাকুরের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এর আগে হৃত্বিকের সঙ্গে ‘সুপার থার্টি’ কিংবা শহিদ কাপুরের সঙ্গে ‘জার্সি’ সিনেমায় নিজের শতভাগ ঢেলে দিলেও, ওভাবে আলোচনায় আসতে পারেননি। লাস্যময়ী এ অভিনেত্রী ছোট পর্দায় ‘কুমকুম ভাগ্য’ সিরিয়ালে অভিনয়ের মাধ্যমে সিরিয়াল জগতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সিরিয়ালে তিনি স্মৃতি ঝা প্রজ্ঞার ছোট বোন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি ‘সিয়া কে রাম’, ‘সিন্দুরাম’, ‘ইরু মালারগাল’ ইত্যাদি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন।
পঙ্কজ ত্রিপাঠি
অভিনেতা হিসেবে পঙ্কজ ত্রিপাঠির প্রাঞ্জল অভিনয় দক্ষতা নিয়ে যতই প্রশংসা করা হবে, তা ততই কম হয়ে যাবে। ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’-এর সুলতান থেকে মির্জাপুরের ‘কালিন ভাইয়া’ সব জায়গাতেই তিনি দুর্দান্ত। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। ‘পাউডার’ টিভি সিরিয়ালে সবার সামনে নিজেকে মেলে ধরেন পঙ্কজ। এতে তিনি ড্রাগ লর্ড নাভিদ আনসারির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এরপর ‘পবিত্র রিশতা’, ‘সরোজিনী’, ‘গুলাল’-এ তাঁকে দেখা যায়। অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’ দিয়ে বলিউডে নিজের স্থান পাকা করে নেন পঙ্কজ।
রনিত রায়
রনিত রায়কে রনিত নামের বদলে অধিকাংশ মানুষই বোধহয় আদালত সিরিয়ালের কেডি পাঠক হিসেবেই চেনেন। এ চরিত্রের সঙ্গে তিনি নিজেকে এমনভাবে মিশিয়ে দিয়েছিলেন, যেন চরিত্রটি শুধু তাঁর জন্যই। বলতে গেলে তিনি টেলিভিশন সিরিয়াল ইন্ডাস্ট্রির একজন সুপারস্টার। টিভির পর্দায় তাঁর অনেক জনপ্রিয় শো রয়েছে। প্রত্যেক শোতে তিনি আলাদা আলাদা অবতারে নিজেকে সামনে এনেছেন। এর মধ্যে আদালতের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হলো– ‘ইতনা কারো না মুঝে পেয়ার’, ‘স্বর্ণঘর’, ‘বন্দিনী’, ‘কাসামসে’ ইত্যাদি। বলিউডে তিনি ‘কাবিল’, ‘উদান’, ‘শামশেরা’, ‘টু স্টেটস’, ‘সরকার থ্রি’, ‘লাভযাত্রী’সহ অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
আয়ুষ্মান খুরানা
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে টেলিভিশনে ভিডিও জকি হিসেবে কাজ করতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। ২০০৪ সালে ‘এমটিভি রোডিজ’ রিয়ালিটি শোতে দেখা গেছে তাঁকে। কাজ করেছিলেন ‘কেয়ামত’ এবং ‘এক থি রাজকুমারী’-এর মতো সিরিয়ালেও। সাবলীল অভিনয় ও সংগীত প্রতিভা তাঁকে সহজেই বলিউডে সুযোগ করে দেয়। প্রথম ছবি ‘ভিকি ডোনার’-এ অভিনয় করে আলোচনায় চলে আসেন আয়ুষ্মান। সেই সঙ্গে ফিল্মফেয়ার জিতে নেন সেরা নবাগত অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার। বলিউডে ফ্রেশ কন্টেন্ট নির্মাণে আয়ুষ্মান খুরানার প্রতি দর্শকদের ভরসা ও ভালোবাসাটা একটু অন্য ধাঁচের। নিত্যদিনের ছা-পোষা চাকরিজীবী থেকে কঠিন মুখের পোড় খাওয়া পুলিশ– সবকিছুতেই তিনি প্রাঞ্জল ও সাবলীল, যেন ভারতের একজন আম-আদমি। ‘দম লাগা কে হেইশা’, ‘বরেলি কি বরফি’, ‘ড্রিম গার্ল’, ‘বাধাই হো’, ‘আন্ধাধুন’, ‘আর্টিকেল ১৫’সহ একের পর এক সফল ও হিট ফিল্ম উপহার দিয়ে দর্শক, প্রযোজক ও সমালোচকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি।