ঘোষিত দুই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আমিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক ও কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুকে সদস্যসচিব করা হয়। এই কমিটিতে মহানগর যুবদলের সভাপতি উত্বাতুল বারীকে ১৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। মূলত এতেই ক্ষুব্ধ হন মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই সোমবার রাত ১১টায় নগরের বাদুড়তলা এলাকায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আমিরুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে আমিরুজ্জামান বলেন, ‘এ কমিটি আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে। যাঁরা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের কাছে গিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেন, তাঁদের দলের সদস্যসচিব করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে জীবনে একটি জিডি হয়নি, তাঁরা দলের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। আমি যাঁদের নিয়ে রাজনীতি করব, তাঁরা যদি দলে ভালো পদ না পান, তাহলে কাদের নিয়ে রাজনীতি করব? উত্বাতুল বারী মহানগর যুবদলের সভাপতি ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। তাঁকে করা হয়েছে মহানগর বিএনপির ১৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক। এ অবস্থায় আমি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি। একই সঙ্গে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন কুমিল্লায় আসার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম চৌধুরী, আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, সরওয়ার জাহান দোলন, রেজাউল কাইয়ুম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান, মো. বিল্লাল ও উত্বাতুল বারী।

একই দিন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে সাবেক সংসদ সদস্য আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে আহ্বায়ক এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করা হয়। এ কমিটি নিয়েও সোমবার রাতের সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

ওই সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম বলেন, যাঁকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব করা হয়েছে, তাঁর নামের আগে ‘পাগলা’ শব্দ আছে। তাঁকে মানুষ পাগলা জসিম বলে। তাঁর বাড়ি ভারতীয় সীমান্ত এলাকায়। তিনি মাদক ও সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। টাকার বিনিময়ে এ কমিটি আনা হয়েছে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যদি ১ শতাংশও সঠিক হয়, তাহলে রাজনীতি থেকে চিরতরে ইস্তফা দেব। প্রশাসন ও সাংবাদিকেরা তদন্ত করে দেখুন।’

সাবেক সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি নিয়ে বিতর্ক আছে। এটা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভুলভ্রান্তি শুধরে নেওয়া হবে।

নেতার বাড়ি ভাঙচুর

এদিকে সন্ধ্যায় কমিটি ঘোষণার পর সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা নগরের রেসকোর্স এলাকায় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়ার বাড়িতে ভাঙচুর করেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা বাসার টেলিভিশন ও গ্লাস ভেঙে ফেলেন। তখন মোস্তাক মিয়া বাসায় ছিলেন না। মোস্তাক মিয়া বলেন, ‘কেন্দ্র কমিটি গঠন করেছে। কমিটি প্রকাশের পর কে বা কারা আমার বাসায় গিয়ে ভাঙচুর করে। বিষয়টি দল দেখছে।’

সদস্যসচিবের মোটর শোভাযাত্রা

এদিকে মহানগর বিএনপির কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে গতকাল বেলা একটার দিকে ৫০০ মোটরসাইকেলে করে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লার অনুসারীরা। ইউসুফ মোল্লা বলেন, ‘তারেক রহমানসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে তারা অপপ্রচার করছে।’

একই দিন ঘোষিত কুমিল্লা উত্তর জেলার ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে কোনো ধরনের ক্ষোভের কথা জানা যায়নি। এতে আক্তারুজ্জামান সরকারকে সভাপতি এবং এ এফ এম তারেক মুন্সীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সদ্য বিদায়ী সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী বলেন, ‘কমিটি নিয়ে কোনো ক্ষোভ নেই। আমি তো দুই মেয়াদে দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলাম।’