গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অন্তঃসত্ত্বা মা ও তাঁর অনাগত সন্তানের জীবনের ওপর বিশাল বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত, গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু, একলামশিয়া, গর্ভাশয়ে পানির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সিজারিয়ান অপারেশনের হার বৃদ্ধির পেছনে ডায়াবেটিসের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এর পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর ওজন বৃদ্ধি, হৃৎপিণ্ড ও কিডনির জন্মগত ত্রুটি, জন্মের পর শ্বাসকষ্ট, নবজাতকের হাইপোগ্লাইসেমিয়া, খিঁচুনি, জন্ডিস, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া, লোহিত রক্তকণিকা বেড়ে যাওয়ার মতো মারাত্মক জটিলতার জন্ম দিতে পারে মায়ের ডায়াবেটিস। এ কারণে যাদের আগে থেকে ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের গর্ভধারণের আগে অনেক বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে।
চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকেই রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি নিতে হবে। ডায়াবেটিসের জন্য যারা ইনসুলিন নিচ্ছিলেন, তাদের ইনসুলিনের ধরন বদলে ফেলতে হবে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য। এর পাশাপাশি গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকে ফলিক এসিড সেবন করতে হবে সন্তানের জন্মগত ত্রুটি রোধের জন্য।
চোখের সমস্যা: গর্ভধারণের পর ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে গর্ভধারণের আগে অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। চোখে জটিলতা বেশি থাকলে গর্ভধারণ করা অনুচিত। রেটিনোপ্যাথি থাকলে গর্ভধারণের পর অন্তত তিনটি পর্যায়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে চোখের জটিলতা পরখ করার জন্য। এ ছাড়া সন্তান প্রসবের তিন মাস পর চোখের পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে রেটিনার অবস্থা জানার জন্য।
কিডনি সমস্যা: গর্ভকালীন সময় ডায়াবেটিস রোগীর কিডনি জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর মূত্রের সঙ্গে অতিরিক্ত এলবুমিন বা আমিষ বেরিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া তাদের কিডনি পরিস্রাবণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। সে কারণে কিডনির অবস্থা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
আনুষঙ্গিক রোগ নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস রোগীর অনেকেরই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকে। গর্ভধারণের আগে রক্তচাপ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মাঝে রাখতে হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সব ধরনের ওষুধ এ সময় নিরাপদ নয়। যাদের টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের গর্ভধারণের আগে অবশ্যই থাইরয়েডের স্ট্যাটাস পরীক্ষা করে নিতে হবে। এই হরমোনের ঘাটতি মা ও শিশুর ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। সে জন্য থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা