‘কেন যে ওদেরকে (স্ত্রী-কন্যা) কাচ্চি বিরানি খেয়ে আসতে বলেছিলাম। কে জানতো, এই কাচ্ছিই ওদের জীবন শেষ করে দিবে। আমার সংসার তছনছ করে দেবে।’
রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে আগুনের ঘটনায় ব্যবসায়ী গোলাম মহিউদ্দিন স্ত্রী ও কন্যা সন্তান হারিয়েছেন। গতকাল রাত থেকে এসব বলে আহাজারি করছেন। তিনি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কান্দুঘর গ্রামের বাসিন্দা হলেও পরিবার নিয়ে রাজধানীর শাহজাহানপুরে বসবাস করেন।
নিহতদের মধ্যে আছেন তার স্ত্রী ভিকারুন্নেছা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার করিম (৪৭) ও তার মেয়ে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতি তাজরিন (২৩)। তাজরিনও একই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে তাজরিন ছিল বড়।
গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে স্ত্রী ও কন্যার মরদেহ খুঁজে পাই।’ তিনি সমকালকে বলেন, ‘স্ত্রী দাঁতের ব্যথায় ভুগছিল। দাঁত দেখাতে চিকিৎসকের কাছে যান মেয়েকে নিয়ে। ফেরার পথে মেয়ে কাচ্চি খেতে চাইলে খেয়ে আসার কথা বলি। কে জানতো, এভাবে তাদের হারাতে হবে।
মহিউদ্দিন আহাজারি করে বলেন, তাদের দাফন কুমিল্লায় গ্রামে না করে রাজধানীর শাহজাহানপুর কবরস্থানে করবো। মহিউদ্দিনের মামা সিরাজুল ইসলাম জজু ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করেছি, মরদেহ ঢাকায় দাফন করা হচ্ছে। স্ত্রী সন্তান হারিয়ে সেই পরিবারে এখন শোকের ছায়া। আমরাও শোকাহত।
এদিকে এ ঘটনায় আজ সকালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সব সদস্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শোক প্রকাশ করেছেন। জুম্মার নামাজ শেষে দুপুর ২টায় ভিকারুন্নেছার মূল শাখার কলেজ মাঠে ছাড়াও আর দুইটি জানাজা শেষে শাহজাহানপুর কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।