কারখানা স্থাপনে ৪৮০ কোটি টাকা অনুদান চায় মিল্ক ভিটা

ধেল গাভির জাত উন্নয়ন এবং দুধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতে কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। মিল্প ভিটার মধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন প্রকল্প বাজেটে অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে। বাস্তবায়নে পুরো অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদানে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, ঋণ নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা মিল্ক ভিটার নেই। তাই ৪৮০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য একটি চিঠি দিয়ে এ অনুরোধ জানান। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়নের (মিল্ক ভিটা) মাধ্যমে বাস্তবায়নে ‘বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর জেলায় দুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতে দুধালো গাভির জাত উন্নয়ন ও দুধের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কারখানা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায়
যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে ৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, এ প্রকল্পের আওতায় রংপুর বিভাগে বিদ্যমান দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রগুলোর দুধ প্রক্রিয়াজাত করে জেলা শহরে বিপণনের জন্য পর্যায়ক্রমে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য বিপণন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রকল্প এলাকায় সমিতির সদস্যদের মধ্যে সংকর জাতের বকনা গরু কেনার জন্য ঋণ বিতরণ এবং রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ১৫টি দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র স্থাপন, বিভাগীয় শহরে একটি দুধ ও দুগ্ধপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন এবং প্রতিটি সমিতিতে পর্যায়ক্রমে একটি করে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রকল্পটির অর্থায়নের ধরন নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়। অর্থ বিভাগ প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৪৮০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু ঋণ হিসেবে টাকা নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা মিল্ক ভিটার নেই। তা ছাড়া ইতোপূর্বে মিল্ক ভিটার মাধ্যমে নেওয়া সব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব অর্থ থেকে অনুদান বা ইকুইটি হিসেবে ব্যয় করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনেরও সম্মতি রয়েছে। তাই এ প্রকল্পের অর্থ ঋণ হিসেবে নয়, বরং অনুদান বা ইকুইটি হিসেবে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে কো-অপারেটিভ ম্যানেজমেন্টের অধীনে কার্যক্রম শুরু করে মিল্ক ভিটা। সারাদেশে তাদের ১১টি কারখানা রয়েছে এবং এগুলোর প্রতিটিতে একাধিক পণ্য তৈরির পৃথক প্লান্ট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে কৃষক সমিতি দ্বারা পরিচালিত হয়।
এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, ১৯৭৩ সালে সমবায় ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনে আসে মিল্ক ভিটা। এর আগে ও পরে প্রতিষ্ঠানটিকে সরকার বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু একই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে বেসরকারি খাতের আড়ং, প্রাণ, আকিজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান লাভবান হলেও নানা অনিয়মের কারণে মিল্ক ভিটা সেভাবে এগোতে পারেনি। তা ছাড়া গাভির জাত উন্নয়ন সংক্রান্ত যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় বর্তমান সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ প্রকল্পের বিপরীতে অনুদান না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পরবর্তী সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে অন্য কোনো নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীপঙ্কর মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। মকবুল হোসেন সমকালকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণের পরিবর্তে ৪৮০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের এখনও কিছু জানায়নি। অনুদান না পাওয়া গেলে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কষ্টকর হয়ে যাবে।