নীলফামারীর সৈয়দপুরের আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠ দখল করে স্থানীয় এক শিল্পপতি তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করায় ও এ বিষয়ে প্রশাসনকে না জানানোয় ফেঁসে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আহসান হাবিব। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে অধ্যক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। অধিদপ্তর সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
র আগে গত ১ এপ্রিল এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মহসিনুল হক মহসিনসহ গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল।
জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নীলফামারীর সৈয়দপুরের আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠ দখল করে স্থানীয় এক শিল্পপতি তার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বিয়ে উপলক্ষে নির্মাণ করা হয় তাজমহল। সেই তাজমহলের সামনে অতিথিদের জন্য নির্মাণ করা হয় বিশাল প্যান্ডেল। পাঁচ হাজার অতিথিকে বসানোর জন্য সেই প্যাণ্ডেলটি সাজানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, ছেলের বিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করতে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠটি সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন সৈয়দপুরের বিশিষ্ট শিল্পতি আলতাফ হোসেন। প্রায় কোটি টাকা দিয়ে ঢাকার ‘শাহজাহান ইভেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের সাজসজ্জার কাজ করিয়েছেন শিল্পপতি আলতাফ হোসেন। তবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিয়ের আয়োজন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে।
এদিকে অধিদপ্তর থেকে অধ্যক্ষকে পাঠানো শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে, গত ১ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সৈয়দপুর আদর্শ গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে সেই বিয়ে আয়োজনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। শোকজ নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, বিয়ের আয়োজনের বিষয়ে সৈয়দপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা প্রশাসনের কাউকে জানানো হয়নি। তাই প্রশাসনের কাউকে না জানিয়ে কলেজের মাঠে বিয়ের আয়োজন করায় কোন তার এমপিও বন্ধ করা হবে না তা জানতে চেয়ে অধ্যক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজ নোটিশ পাওয়ার তিন কর্মদিবসের মধ্যে অধ্যক্ষকে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠানো একটি চিঠিতে জানান, এ বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করার আয়োজনকারীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে অধ্যক্ষ আহসান হাবিব জানিয়েছেন, গভর্নিং বডির সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বিয়ের আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি বিয়ে আয়োজনের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি। করোনা মহামারির সময়ে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির এ অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেয়া কোন অবস্থাতেই কাম্য নয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন ডিসি।
যদিও বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় অধ্যক্ষ আহসান হাবিব স্থানীয়দের জানিয়েছিলেন, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
শিল্পপতি আলতাফ হোসেন বলেছিলেন, অতিথির সংখ্যা অনুযায়ী কমিউনিটি সেন্টারে সংকুলান হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের অবগত করে এ আয়োজন করা হয়েছে। এ জন্য সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়রের কাছে অনুমতি নেয়া হয়েছে।