করোনার টিকার আওতা বাড়ছে

ওষুধ বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনার ইচ্ছা থাকা ভালো। কিন্তু যে বয়সসীমায় মৃত্যু বেশি হচ্ছে, তাদের টিকা পাওয়া আগে নিশ্চিত করা দরকার। সীমিতসংখ্যক টিকায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার থাকা উচিত।’

জনসংখ্যা বনাম টিকা

জাতিসংঘের বিশ্ব জনসংখ্যা প্রক্ষেপণ (২০২০ সাল) অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৭ লাখ। জনসংখ্যাবিদেরা বলছেন, ৩৫ বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যা ৩ কোটি ৪১ লাখ। এদের দুই ডোজ করে দিতে ৬ কোটি ৮২ লাখ টিকার প্রয়োজন।

এ পর্যন্ত দেশে মোট টিকা এসেছে ১ কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ৩ লাখ, চীনের সিনোফার্মের টিকা ৩১ লাখ। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার ২৫ লাখ ও ফাইজারের ১ লাখ টিকা। এতে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব।

করোনার টিকার আওতা বাড়ছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি টিকা কেনা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০ লাখ টিকা এসেছে। বাকি টিকা অল্প সময়ের মধ্যে চলে আসবে।’

সিনোফার্মের সব টিকা এলে মোট টিকার পরিমাণ দাঁড়াবে ২ কোটি ৯০ লাখে। তাতে ১ কোটি ৪৫ লাখ মানুষের দুই ডোজ টিকা নিশ্চিত হবে।

এ ছাড়া কোভ্যাক্স থেকে বাংলাদেশকে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে। সেই টিকা আসবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে। কিন্তু সেই টিকা কবে নাগাদ আসবে, তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের সরকারি চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে একই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পর্যায়ক্রমে দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে। এ জন্য ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দিতে হবে। এদের দুই ডোজ করে দিতে মোট ২৬ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার টিকার প্রয়োজন হবে। এই বিপুল পরিমাণ টিকা কীভাবে সংগ্রহ করা হবে বা কেনা হবে, তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে আছেন।

এ পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী তিন–চার মাসে আরও ৫ শতাংশ টিকার আওতায় আসবে। ‘এতে কী লাভ?’ এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকা পাওয়া ১০ শতাংশ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দিলেও তাদের অনেকেরই হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। কেউ হাসপাতালে গেলেও অনেকেরই অক্সিজেনের প্রয়োজন কম হবে। যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হবে, তাদের অনেকেরই আইসিইউ সেবার দরকার হবে না। টিকা পাওয়া মানুষের মধ্যে মৃত্যু কম থাকবে।’