হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়, আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার সক্ষমতার প্রতীক। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশে তাদের সুবিধাভোগী, বিএনপি-জামায়াতসহ আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনা-ষড়যন্ত্র করেছিল। সেই জাল ছিন্ন করে, তাদের হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে এ রকম একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভবপর হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল, আজ তাদের কেউ কেউ নিশ্চুপ হয়ে গেছে। ষড়যন্ত্রে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারাও নিশ্চুপ। তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা দেশে না বিদেশে, আমিও জানি না। আর কেউ কেউ সুর বদলেছে।
প্রতিবন্ধকতা শুধু সরকারের বাইরে থেকে নয়, সরকারের ভেতর থেকেও কেউ কেউ দ্বিধান্বিত ছিলেন। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীকে নানা সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হয়েছে।’
বিএনপির এখন লজ্জায় তো মাথা হেঁট হয়ে গেছে। কী বলে লজ্জা রক্ষা করা যায়, সেটি খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু বিএনপিকে সেতু উদ্বোধনের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে উল্লেখ তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে মির্জা ফখরুল বললেন, “এই সেতু কি ওনাদের বাপের।” আমরা তো বলি নাই এই সেতু কারও বাপের। আরও বলেছেন, “এই সেতু দিয়ে কি স্বর্গে যাব!” এই সেতু প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশের আপামর জনতার জন্য নির্মাণ করেছেন।’
এ সময় সেতু নির্মাণে খরচের খতিয়ান বর্ণনা করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে দ্বিতল সেতু নির্মাণ পরিকল্পনায় প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ১২০ কোটি ডলার বিশ্বব্যাংকের কাছে চাওয়া হয়েছিল। ডলারের বর্তমান মূল্য ৯৩ দশমিক ১৩ টাকা হিসাবে ৩০০ কোটি ডলারের মূল্য ২৮ হাজার কোটি টাকা; অর্থাৎ ২০১১ সালে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ডলারকে টাকায় রূপান্তর করলে দেখা যায়, খরচ একই জায়গায় রয়ে গেছে। অধিকন্তু ষড়যন্ত্রের কারণে এবং নিজের টাকায় করতে গিয়ে কয়েক বছর দেরি না হলে এই খরচ আরও কম হতো।’
পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন উল্লেখ করে তুলনামূলক আর্থিক চিত্র তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘১৯১০ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে নির্মিত হার্ডিঞ্জ সেতু আজ নির্মাণ করতে স্বর্ণমূল্য হিসেবে লাগত ১৭ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু তার চেয়ে সাড়ে ৩ গুণ বড়, অর্থাৎ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সে হিসাবে পদ্মা সেতুর সমান দৈর্ঘ্যের হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মাণ করতে লাগত ৫৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। আর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হচ্ছে শুধু রেলসেতু। পদ্মা সেতুর ওপরে চার লেনের সড়ক, নিচে রেল; অর্থাৎ এই সেতু নির্মাণে ১ লাখ হাজার কোটি টাকা লাগার কথা ছিল। সুতরাং আজ যাঁরা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের বলব, অহেতুক প্রশ্ন তুলবেন না। পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনা কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন চুপ্পু। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারাকাত, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খান মাহমুদ আমানত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।